মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ

একটি অর্থবছর শেষ হতে চলেছে। সামনে নতুন অর্থবছর। নতুন অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী গত বছর যে বাজেট পেশ করেছিলেন, সেটা ছিল উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট। এবারও একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানা গেছে।


কেবল একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট প্রণয়ন করলেই চলবে না; বাস্তবায়নও করতে হবে। আমাদের দেশে বরাবরই দেখা গেছে, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে থাকি। বাজেট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবও অনেক সময় প্রকট হয়ে দেখা দেয়। গত অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন ও নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদরা এরই মধ্যে তাঁদের মত দিয়েছেন। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থাও বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে। একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার মতে দেখা যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতিই এখন দেশের জন্য বড় সমস্যা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, গত জুলাই মাস থেকেই দেশে মূল্যস্ফীতির গতি ঊর্ধ্বমুখী। এ সময় সাড়ে ৭ শতাংশের কাছাকাছি ছিল সাধারণ ভোক্তা মূল্যসূচক। জানুয়ারিতে ৯ শতাংশের ওপরে উঠে যায়। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষকে বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। ফলে তাদের হাতে আগের বছরের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বেশি অর্থ রাখতে হয়েছে। অন্যদিকে ২০০৯-১০ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। এমনকি ফেব্রুয়ারিতে তা ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে উঠেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু খাদ্যের সরবরাহ বাড়ানোই যথেষ্ট নয় বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এ জন্য কর্মসংস্থান ও আয়ের দিকে নজর দিতে হবে এবং বিনিয়োগও সচল রাখতে হবে বলে গবেষণা সংস্থাটি মনে করে। একই সঙ্গে গবেষণা থেকে এটাও জানা গেছে, মূল্যস্ফীতিজনিত চাপের পাশাপাশি বিনিয়োগপ্রবাহে বিগত অর্থবছরে যেমন কোনো গতি ছিল না, তেমনি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতিও ছিল শ্লথ।
মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে সিপিডির প্রস্তাবে কৃষি বাজারজাতকরণ বিভাগের উন্নয়ন, আরো বেশি গুদাম ও হিমাগার নির্মাণ এবং টিসিবির জন্য তহবিল বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ ও উৎপাদন সহায়ক রাজস্ব নীতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি।
দেখা যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি এখন আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা দূর করতে সবার আগে বাড়াতে হবে আমাদের দেশীয় উৎপাদন। পাশাপাশি বাড়াতে হবে পণ্য সরবরাহ। তবে সবার আগে সৃষ্টি করতে হবে কর্মসংস্থান। মানুষের আয় বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করতে হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন। অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি ক্ষেত্রে অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করা হয়। এ অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগও দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দেয়। সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের মতো দেশে উন্নয়ন থেমে থাকে অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে। আমাদের দেশে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যেমন নেই, তেমনি গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যাও প্রকট। এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো উপায় খুঁজে বের করা যায়নি। গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য কাজে লাগানো যাচ্ছে না বাপেঙ্কে। দেশের উন্নয়নে আগামী অর্থবছরে বাজেটে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। চাপমুক্ত রাখতে হবে দেশের মানুষকে। সে জন্য কর কাঠামো নিয়েও নতুন করে ভাবা যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.