গরিব রোগীর চিকিৎসা

সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করুন চিকিৎসাসেবা এখন পণ্যে পরিণত হয়েছে। তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু সেটি সম্পূর্ণভাবে মানবতাবিবর্জিত হবে কি? কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ বেসরকারি চিকিৎসালয়ের ক্ষেত্রে এ সত্যটি কল্পনার মতো। আর তার ছায়া পড়ছে সরকারি হাসপাতালেও।


তাদের কাছে মানুষের জীবন বড় কথা নয়, চিকিৎসা প্রদানের পেছনে অর্থ রোজগার করাই একমাত্র বিষয় হিসেবে গণ্য। এ মানসিকতার কারণে বাংলাদেশে অনেক মানুষকেই বিনা চিকিৎসায় জীবন দিতে হয়। কিংবা রোগযন্ত্রণা ভোগ করতে হয় হাসপাতালের কাছাকাছি থেকেও। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকের চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এ বিধান বাস্তবায়ন করা প্রতিটি চিকিৎসাকেন্দ্রের জন্য অতি জরুরি। সংবিধানের এ নির্দেশনাকে মান্য করার জন্য বাংলাদেশে চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠারও আগে উদ্যোক্তাকে এ মর্মে অঙ্গীকার করতে হয় যে তারা বিনা মূল্যে গরিব রোগীদের চিকিৎসা চালিয়ে যাবে। কিন্তু সরকারি অনুমতি পাওয়ার পর প্রায় প্রত্যেকেই সেই অঙ্গীকারের কথা ভুলে যায়। স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানকে এর জন্য বিশেষ সরকারি সুযোগও দেওয়া হয়ে থাকে। তার পরও যখন দেখা যায় ঢাকার শিশু হাসপাতাল থেকে পয়সার অভাবে দিনমজুর সুরুজ আলী তাঁর ১৪ মাসের শিশুকে বিনা চিকিৎসায় ফিরিয়ে নিচ্ছেন, তখন অবাকই হতে হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বৃহত্তম শিশু চিকিৎসালয়। সংগত কারণেই এখানে শিশু রোগীদের চিকিৎসা লাভের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে সব শ্রেণীর মানুষের। কিন্তু সামান্য ফি জোগাড় করতে পারেননি বলে নাগরিক অধিকারবঞ্চিত হয়ে ফিরে যেতে হলো সুরুজ আলীকে।
চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো যে গরিব রোগীদের চিকিৎসার নির্দেশনাকে অমান্য করছে তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও অকপটে স্বীকার করেছেন। বিনা চিকিৎসায় কোনো মানুষ যাতে ফেরত না যায় সে জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সার্কুলার জারি করেছে। কিন্তু এ সার্কুলার জারির মাধ্যমেই কি দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে সরকারের? সরকারি-বেসরকারি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত চিকিৎসাকেন্দ্রগুলো গরিব রোগীদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিচ্ছে কি না, তা তদারকির কাজটিও করতে হবে। সরকারের কাছে অঙ্গীকার করেও যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থের কারণে রোগীর চিকিৎসা করছে না, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তা না হলে এ দুরবস্থা দূর করা সম্ভব হবে না। সরকারের অনেক শুভ উদ্যোগও চিকিৎসকদের দলবাজির কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের কর্মসময়ে বাইরে রোগী না দেখার নির্দেশনাও কার্যকর হবে কি না সন্দেহ দেখা দিয়েছে সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের হুমকির কারণে। আর এ অবস্থা যে নতুন তাও নয়। চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালেও তাদের দলীয় চিকিৎসকরা সেই কাজটি করেছেন। তাই চিকিৎসাসেবায় দলবাজি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে শুধু গরিব মানুষ কেন, সব মহলের রোগীরই চিকিৎসাপ্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

No comments

Powered by Blogger.