অধিকারের মাসিক প্রতিবেদন- দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিঃ বিচারবহির্ভূত হত্যা ৯ গার্মেন্টে নিহত ৭

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সঙ্ঘটিত সারা দেশের বিভিন্ন ঘটনাবলি পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি, পুলিশের বিষাক্ত পিপার স্প্রে ব্যবহার, সভা সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি, সীমান্তে বিএসএফের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়েছে। গত মাসে সারা দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ৯ জন, তৈরী পোশাক কারখানায় নিহত হয়েছেন সাতজন। তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলার সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন এবং ১৬ জন আহত ও ৯ জন অপহৃত হয়েছেন।

অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয় ‘গণতন্ত্র’ মানে নিছক নির্বাচন নয়, রাষ্ট্র গঠনের-প্রক্রিয়া ও ভিত্তি নির্মাণের গোড়া থেকেই জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় নিশ্চিত করা জরুরি। সেটা নিশ্চিত না করে যাত্রা শুরু করলে তার কুফল জনগণকে বয়ে বেড়াতে হয়। জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা না গেলে তাকে ‘গণতন্ত্র’ বলা যায় না। নিজের অধিকারের উপলব্ধির মধ্যে দিয়েই অপরের অধিকার এবং নিজেদের সমষ্টিগত অধিকার ও দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়া ও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। ব্যক্তির যে মর্যাদা অলঙ্ঘনীয়, প্রাণ, পরিবেশ ও জীবিকার যে নিশ্চয়তা বিধান করা ছাড়া রাষ্ট্র নিজের ন্যায্যতা লাভ করতে পারে না এবং যে সব নাগরিক অধিকার সংসদের কোনো আইন, বিচার বিভাগীয় রায় বা নির্বাহী আদেশে রহিত করা যায় নাÑ সেই সব অলঙ্ঘনীয় অধিকার অবশ্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের ভিত্তি হওয়া উচিত। বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীদের গণভিত্তিক সংগঠন অধিকার সেসব অধিকার ও দায়িত্ব বাস্তবায়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক সহিংসতা অব্যাহত উল্লেখ করে অধিকারের প্রতিবেদনে বলা হয়Ñ জানুয়ারি মাসে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে ১৭ জন নিহত ও ১৬৪৩ জন আহত হয়েছেন।  আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে নিহত হয়েছেন দুইজন ও আহত হয়েছেন ২৮৮ জন। অন্য দিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাতে নিহত হয়েছেন একজন ও ১৫৯ জন আহত হয়েছেন। ৩১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর হরতালে বিভিন্ন জেলায় যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে বগুড়ায় জামায়াত-শিবির এবং ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে শিবির নেতা আবু রুহানী, কর্মী আবদুল্লা ও মিজানুর রহমান, ফেনীতে অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ ইমন নামে এক যুবক এবং যশোরে পুলিশ কনস্টেবল জহুরুল হক মারা যান। এ ছাড়া ৯৬ জন নারী ধর্ষণ, ৪২ জন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। আর জানুয়ারি মাসে গার্মেন্টে সাতজন নিহত ও ২৩৫ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়া, দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় নানা সহিংস ও অপরাধ সঙ্ঘটিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে জানুয়ারি মাসে জেল হেফাজতে তিনজনের মৃত্যু, দুইজন গুম ও একজন নির্যাতিত হয়েছেন। ২০ সাংবাদিক আহত, দুইজন হুমকির সম্মুখীন ও একজন লাঞ্ছিত হন। এ ছাড়া পাঁচজন এসিড সহিংসতার শিকার ও ২৩ জন যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

অধিকারের সুপারিশ : সরকারকে তার দলীয় দুর্বৃত্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করার পরামর্শ দিয়েছে অধিকার। এ ছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা না দেয়া, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা না করা এবং অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড থেকে সরকারকে বিরত থাকতে হবে।

তা ছাড়া সরকারকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের সম্মুখীন করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আটক এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে।

বিএসএফের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সরেজমিন অনুসন্ধান করে এর বিরুদ্ধে ভারতের কাছে দ্রুত প্রতিবাদ জানানো এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে দ্রুততার সাথে বিচার করে অপরাধীদের শাস্তির সুপারিশ করেছে অধিকার।
       


No comments

Powered by Blogger.