ভূমিকম্প-সুনামি-বিস্ফোরণ- আমরা জাপানের পাশে

 ভয়াবহ ভূমিকম্প ও বিধ্বংসী সুনামির পর এখন নতুন আতঙ্কে সময় গুনছে জাপান। দেশটির ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রটিতে পরপর দুটি রিঅ্যাক্টর বিস্ফোরিত হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা-নাগাসাকিতে আণবিক বোমা হামলার পর এত বড় সংকটে আর পড়েনি দেশটি। পরমাণু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ফুকুশিমা পরমাণুকেন্দ্রে বিস্ফোরণ রাশিয়ার চেরনোবিল বিস্ফোরণের মতো বিয়োগান্ত ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। এ কথা সত্য, হিরোশিমা-নাগাসাকিতে আণবিক বোমা হামলা যে অদৃষ্টপূর্ব ধ্বংসযজ্ঞ, প্রাণক্ষয় ও যুগের পর যুগে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মধ্যে ভোগান্তি ও অসুখ তৈরি করেছিল, পৃথিবীর কোনো ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে তার তুলনা চলে না। কিন্তু চেরনোবিল বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও কোনোভাবে প্রতিক্রিয়ায় কম নয়। পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর নানা ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি ছাড়াও এ বিস্ফোরণে ভোগান্তির শিকার হয়েছে বিস্ফোরণ এলাকার আশপাশের বহু মানুষ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুগছে চেরনোবিলের কারণে। ১১ মার্চের ভূমিকম্পের পর ফুকুশিমার দাই-ইচি পরমাণুকেন্দ্রের রিঅ্যাক্টরে ঠাণ্ডাকরণ পদ্ধতি ভেস্তে গিয়েছিল বলে খবর মিলেছিল। তখন থেকে সবাই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ঠাণ্ডা করার জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ বিঘি্নত হলে রিঅ্যাক্টরে বিস্ফোরণ ঘটবে। ১২ মার্চ একটি রিঅ্যাক্টরে বিস্ফোরণ ঘটেছে। ১৪ মার্চ ঘটল আরেকটি বিস্ফোরণ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দাই-ইচি পরমাণু কেন্দ্রের তৃতীয় রিঅ্যাক্টরেও বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। শুধু দাই-ইচিই নয়, ওনাগাওয়া ও তোকাই পরমাণুকেন্দ্র নিয়েও আশঙ্কা অব্যাহত আছে। বলা হচ্ছে, এ বিস্ফোরণের ফলে পরমাণু কেন্দ্রের ১২ মাইল ব্যাসের মধ্যে অবস্থিত মানুষ, প্রাণী ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। ইতিমধ্যে এলাকাগুলো খালি করা হয়েছে বলে খবর মিলেছে। তবু ইতিমধ্যে অনেকেই তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়েছেন। তেজস্ক্রিয়তা সমুদ্রের পানিতে পেঁৗছালে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি হবে। এতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনপদগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে একথা স্পষ্ট যে, সংকটটি শুধু জাপানের নয়, পুরো পৃথিবীবাসীর। ইতিমধ্যে পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, শান্তিপূর্ণ জ্বালানির জন্য পরমাণু শক্তি ব্যবহারও নিরাপদ কি-না। জার্মানিতে ইতিমধ্যে পরমাণুকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে নাগরিকরা বিক্ষোভ করেছেন। অতীতের ঘটনাবলি তো বটেই, জাপানের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাও বলছে, মারণাস্ত্র প্রস্তুত বা শান্তিপূর্ণ জ্বালানি তৈরি কোনো কাজেই পরমাণু শক্তি ব্যবহার পৃথিবীর জন্য নিরাপদ নয়। জাপানের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই আগামী দিনের করণীয় নির্ধারণে সহায়ক হবে। কিন্তু এখন জাপানের পাশে দাঁড়ানোই বিশ্বের প্রতিটি দেশ ও নাগরিকদের আবশ্যিক দায়িত্ব। ইতিমধ্যে বহু দেশ জাপানে সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে সাহায্য পাঠিয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। কম হোক বেশি হোক, সাহায্য নিয়ে জাপানের পাশে দাঁড়াতে হবে। জাপান আমাদের বন্ধু, উন্নয়ন অংশীদার, প্রতিবেশী। এশিয়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো এ দেশটি আমাদের অন্যতম প্রেরণারও উৎস। সূর্যোদয়ের এ দেশটিতে প্রকৃতি যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেল তাতে অনেকের চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছে। মাইলের পর মাইল জনপদ ধুয়েমুছে গেছে প্রাণের অস্তিত্বসহ। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার লোকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। একটি শহরেই ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিঘি্নত, অনেকটাই অচল। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ অবস্থায় ত্রাণ, উদ্ধার কার্যক্রম বিঘি্নত হচ্ছে। ভূমিকম্পের দুর্ভোগ, প্রাণহানির পর এবার জাপান পারমাণবিক বিস্ফোরণের হুমকি মোকাবেলা করছে। তাদের কঠিন সময়ে আমরা পাশে আছি, তাদের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সহানুভূতি ব্যক্ত করছি। কামনা করছি, ধ্বংসস্তূপ থেকে দ্রুত জেগে উঠুক জাপান।
 

No comments

Powered by Blogger.