বিএনপির প্রতিক্রিয়া-সেতু নয়, নিজস্ব অর্থে ভিত্তিপ্রস্তর হতে পারে

বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সহায়তার অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণায় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলের নেতারা মনে করেন, কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে রক্ষার চেষ্টার কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ অনিশ্চিত হয়ে গেল।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্প করলে হলমার্ক কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা ঘটবে। এমনকি কুইক রেন্টালের চেয়ে বহু গুণ বড় বোঝা জনগণকে বহন করতে হবে। তাঁরা আরো মনে করেন, নিজস্ব অর্থ দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে পারে, পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়।
গতকাল শুক্রবার বিএনপির একাধিক শীর্ষ সারির নেতা এ বিষয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা অবাস্তব ও অবিবেচনাপ্রসূত। বিশ্বব্যাংক ছাড়া অন্য কোনো দাতার কাছ থেকে অর্থ নিয়ে এ সেতু করলে তা দেশের জন্য সহায়ক হবে না। একই সঙ্গে বিএনপি নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন, আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে একটি নয়, দুটি পদ্মা সেতু করবে। আর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নেই এ প্রকল্প করা হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে রাষ্ট্রনায়ক জিয়া গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থ ছাড়া পদ্মা সেতু করতে হলে শুধু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা যাবে। পুরো পদ্মা সেতু নির্মাণ করা অসম্ভব। তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরকার দেশ চালায়। এমনকি ভর্তুকি দিতে দিতে ব্যাংকে টাকা থাকে না। তাই নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু করা অবাস্তব।
তিনি আরো বলেন, সরকারের দুর্নীতি ও একগুঁয়েমির কারণেই দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে না। এতে দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের জনগণ এই সেতু থেকে বঞ্চিত হলো। বিশ্বব্যাংক থেকে এই প্রকল্পের অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিয়ে সরকার অবিবেচনাপ্রসূত কাজ করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন সরকার বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিয়ে জনগণকে ভুল বোঝাচ্ছে যে, তারা নিজস্ব অর্থায়নে সেতু করবে। নিজস্ব অর্থায়ন দিয়ে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রয়োজনীয় ইট-বালুর ব্যবস্থা হবে, পদ্মা সেতু নির্মাণ হবে না। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করার পেছনে সরকারের মন্ত্রীসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত বলে অভিযোগ করে ড. মোশাররফ আরো বলেন, সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে না বলেই বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণ হয়নি। যার জন্য বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেছেন, শর্ত পূরণ না হলে ওই সেতুতে অর্থায়ন তারা পুনর্বিবেচনা করবে না।
কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে বাঁচাতে গিয়ে এমনটা হলো : এম কে আনোয়ার
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণের প্রস্তাব প্রত্যাহার করায় হতাশা ব্যক্ত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার একটি বার্তা সংস্থাকে বলেন, জাতির জন্য দুর্ভাগ্য যে, কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে রক্ষার জন্য পদ্মা সেতুর মতো একটি উন্নয়ন প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে গেল। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া এ সেতু করলে কুইক রেন্টালের চেয়ে বহুগুণ বড় বোঝা জনগণকে বহন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, 'আমরা সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এ প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন নিশ্চিত করার দাবি জানাই।'
এম কে আনোয়ার আরো বলেন, আগামী দিনে জনগণের ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে একটি নয়, দুটি পদ্মা সেতু করবে। আর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নেই এ প্রকল্প করা হবে।
হলমার্কের মতো ঘটনা ঘটবে : আ স ম হান্নান শাহ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়া পদ্মা সেতু করা অসম্ভব। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হলে দুর্নীতির সুযোগ বাড়বে। এটা বাস্তবসম্মতও নয়। হলমার্ক কেলেঙ্কারির মতো ঘটনাও হতে পারে। এক বছর ধরে যে কথা বলে আসছি, শেষ পর্যন্ত তাই হতে যাচ্ছে।'
বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ কলঙ্কিত : মওদুদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি করে সরকার বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে কলঙ্কিত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.