শেষ সাক্ষাৎকারে হিলারির হুঁশিয়ারি-সিরিয়ার আশপাশের কেউ নিরাপদ নয়

সিরিয়ার সংঘাত পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তাঁর মতে, যারা সিরিয়া সংকটকে এত দিন 'অভ্যন্তরীণ' বলে নিজেদের ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে তারা, কেউই নিরাপদ নয়।
বাশার আল আসাদ সরকারকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তার অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার তিনি ইরান ও রাশিয়ারও সমালোচনা করেন। এদিকে ইসরায়েলি বিমান হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে সিরিয়া। সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের ব্যাপারে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেছে সরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া শেষ সাক্ষাৎকারে গত বৃহস্পতিবার সিরিয়া সংকট নিয়ে কথা বলেন হিলারি। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার বিষয়টি ইরান সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। 'আমাদের বিশ্বাস শুধুমাত্র আসাদকে সাহায্য করার জন্যই নয়, বরং সিরিয়ার সামরিক বাহিনীকে সাহায্যের উদ্দেশ্যেও ইরান কর্মকর্তা পাঠাচ্ছে। তারা সিরিয়ায় আরো উন্নত ধরনের অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং আসাদ সেগুলো ব্যবহারও করছেন। সিরিয়া সংকটের শুরু থেকেই ইরান সক্রিয়। সম্প্রতি তাদের তৎপরতা বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং বিষয়টি আমাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।' সিরিয়া সংকট সমাধানের ব্যাপারে দেশটির বিরোধীদলীয় প্রধান মোয়াজ আল খতিব ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই ল্যাভরভের সঙ্গে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বৈঠকের দুই দিন আগে হিলারি এই হুঁশিয়ারি দেন। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে আজ শনিবার এই বৈঠক হওয়ার কথা।
সিরিয়ার সহিংসতায় রাশিয়ার সম্পৃক্ততার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে হিলারি বলেন, 'রাশিয়া যে সিরিয়াকে অর্থ ও সামরিক সরঞ্জাম দেওয়া অব্যাহত রেখেছে, তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট প্রমাণ আছে।' সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সহিংসতা আরো গভীর হওয়ার এবং তা চূড়ান্ত যুদ্ধে রূপান্তরিত হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হিলারি। তিনি বলেন, 'সিরিয়ার সংকটকে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এত দিন গঠনমূলক ভূমিকা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সিরিয়ার অস্থিরতা সীমানা ছাড়িয়ে সেই দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।'
এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উত্তর-পশ্চিমে জামরায়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলার ব্যাপারে জাতিসংঘে অভিযোগ করেছে সিরিয়া। একটি সামরিক গবেষণা কেন্দ্র লক্ষ করে হামলা হয় বলে দাবি করে আসাদ সরকার। নিজেকে রক্ষার অধিকার আছে উল্লেখ করে ইসরায়েলি হামলার উচিত জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে তারা। সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের ইসরায়েলি পদক্ষেপের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। লেবাননে সিরিয়ার রাষ্ট্রদূত আলী আবদেল করিম আলী বলেন, 'ইসরায়েল তার পেছনের মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্র, তাদের আরব ও আঞ্চলিক সহযোগীদের এই আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে।' জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এই পরিস্থিতি নিয়ে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছেন এবং সব পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.