পাগল পাগল মানুষগুলো

শামীমুল হক: পাগল পাগল মানুষগুলো। পাগল সারা দুনিয়া। কেহ পাগল রূপ দেখিয়া, কেহ পাগল শুনিয়া। পাগল  নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল এক আড্ডায়। আলোচনায় উঠে এসেছে অর্ধ পাগল আর পুরো পাগল নিয়ে।
এর মধ্যে একজন একটি গল্প বললেন- এক স্কুল পরিদর্শনে গেছেন এক সরকারি কর্মকর্তা। তিনি একে একে সকল ক্লাস পরিদর্শন শেষে অষ্টম শ্রেণীতে গিয়ে দাঁড়ালেন। এই ক্লাসের একেবারে সামনের সিটে বসা এক ছাত্রকে ডেকে আনলেন কাছে। বললেন, তোমাকে একটি প্রশ্ন করি। ঝটপট উত্তর দেবে। ছাত্রটিও সুবোধ বালকের মতো মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। এবার ওই কর্মকর্তার প্রশ্ন- বাসস্ট্যান্ড থেকে তোমাদের স্কুলে আসতে আমার সময় লেগেছে ১২ মিনিট। তুমি হিসাব করে বলতো আমার বয়স কত? প্রশ্ন শুনে ছাত্রটি কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর ঝটপট উত্তর দেয়, স্যার আপনার বয়স ২০ বছর। উত্তর শুনে ওই কর্মকর্তা খুব খুশি। ফের তিনি প্রশ্ন করলেন, আচ্ছা তুমি কিভাবে বুঝলে? ছাত্রটি এবার বলল, স্যার আমার পাশের বাসার এক ছেলে তার মাকে সকালে বোন ডাকলে বিকালে মা ডাকে। আবার তার বোনকে সকালে মা ডাকলে বিকালে বোন ডাকে। মহল্লার সবাই ওই ছেলেকে আধা পাগল বলে ডাকে। ওই ছেলের বয়স ১০ বছর। আপনি তো পুরো পাগল। ১০ বছরে যদি ওই ছেলে আধা পাগল হয় সে হিসাবে আপনার বয়স ২০। এভাবেই অঙ্ক কষে বের করেছি আপনার বয়স। উত্তর শুনে ওই কর্মকর্তা বলে ওঠেন, পাগল কোথাকার। আসলে কে পাগল আর কে পাগল নয়- কথাবার্তায় বোঝা মুশকিল। তবে সমাজ যে পাগলের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তা সত্যি। কেউ খাওয়ার পাগল, কেউ খাওয়াতে পাগল। আবার কেউ দিতে পাগল, কেউ নিতে পাগল। কেউ গুণের পাগল, কেউ গানের পাগল। কেউ প্রেমের পাগল, কেউ বিরহে পাগল। কেউ ক্ষমতার পাগল, কেউ ক্ষমতায় অন্যকে বসাতে পাগল। কেউ নাচতে পাগল, কেউবা নাচাতে পাগল। কেউ কথার পাগল। এমন অসংখ্য পাগল সমাজে রয়েছে। কেউ ন্যাংটা পাগল, কেউ ঝুপড়ি পাগল। কেউ নেশার পাগল, কেউ বেচার পাগল। আবার কেউ টাকার পাগল। কত রকমের যে পাগল সমাজে। কেউ দুধ বেচে মদ কেনে। আবার কেউ মদ বেচে দুধ কেনে। পাগল আর কাকে বলে। বড় কথা- সবচেয়ে সেয়ানা পাগল কে? এক লাখ টাকা রাখলে তিন মাসে দ্বিগুণ হবে। কিংবা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হলে আজীবন টাকা পেয়ে যাবেন এমন লোভনীয় অফারে মানুষ পাগল হয়ে লাইন ধরে এমএলএম কোম্পানিগুলোতে। সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়া নজরদারি সত্ত্বেও এসব কোম্পানির হাইরাইজ বিল্ডিং উঠছে ক’দিনের মধ্যেই। মানুষের মাথা মানুষে খায় সেখানে। এখানে পাগল কে? মানুষ না এমএলএম কোম্পানি? একের পর এক এসব কোম্পানির টুঁটি চেপে ধরার পরও নতুন করে জন্ম নিচ্ছে অন্য নামে এমন কোম্পানি। মানুষও ছুটছে লাইন ধরে। আবার সত্য কথা বলে এ সমাজে বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসা হয়ে যান মানসিক ভারসাম্যহীন। বঙ্গবন্ধুর চার খলিফার এক খলিফা হিসেবে খ্যাত নূরে আলম সিদ্দিকী হয়ে যান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। বাংলাদেশে সবার প্রিয় খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক হয়ে যান কারও চক্ষুশূল। বজ্রকণ্ঠ বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও এদেশে রাজাকার উপাধি পান। এসব শ্রদ্ধেয় জনকে যারা হেয় করেন তারা কি? কোন উপাধিতে ভূষিত হবেন তারা? রাজনীতি পাগল মানুষগুলো ইদানীং রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছেন। নানা আড্ডায় তারা কেন জানি চুপ। বরং রাজনীতি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা উঠলে বলে ওঠেন, এসব পাগলদের আড্ডার বিষয়বস্তু। আজ থেকে শুরু হচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বইপাগল মানুষগুলো মেতে উঠবেন আনন্দে। মাসব্যাপী এ মেলা বইপাগলদের জন্য নিয়ে এসেছে খুশির বারতা। এ মেলা নিয়ে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। যাদের নেশায় বই পেশায় বই তারা এক মাস মেলার পর বছরব্যাপী থাকেন অপেক্ষায়। আজ থেকে তাদের অপেক্ষার পালা শেষ। বইপাগল মানুষগুলো তাই মেতে উঠবেন বই নিয়ে। প্রকাশনা নিয়ে। আড্ডা নিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.