মাঠের কাজে চলছে সংসার

দল বেঁধে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। চোখে-মুখে আনন্দের আমেজ। আর তা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে দুই চোখের পানি ফেলে জেসমিন (১৫)। যখন বান্ধবীদের সঙ্গে হৈ-হুলস্নুড় করে স্কুল যাওয়ার কথা ঠিক সেই সময় অভাবের তাড়নায় সংসারের হাল ধরেছে জেসমিন।
যে নরম হাতে বইখাতা আর কলম থাকার কথা এখন সে হাতেই মাঠে লাঙ্গল ধরতে হয়েছে তাকে। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী নয়াপাড়া গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের মেয়ে জেসমিন। তিন বছর আগে সাপের কামড়ে বাবা রফিকুল মারা যায়। তখনই সংসারের চাকা থেমে যায়। সংসারের হাল ধরেন মা আবেদা বেগম। সংসারে তিন মেয়ে এক ছেলে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে থাকেন তিনি। অনেক সময় পরিবারের সকলকে নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে কাটাতে হতো । মা যখন পেরে উঠছিলেন না ঠিক সেই সময় বড় মেয়ে জেসমিন সিদ্ধানত্ম নেয় মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে মায়ের পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু গৃহপরিচারিকার কাজ করে সংসারে তেমন কোন উপকার আসবে না এটা বুঝতে পেরে জেসমিন তার সিদ্ধানত্ম বদলে ফেলে। পরে সিদ্ধানত্ম নেয় কৃষি মজুর হিসেবে কাজ শুরম্ন করবে ।
শুরম্ন করে মাঠের কাজ। মাঠে অন্যান্য কৃষি মজুরের সঙ্গে কাজ করতে করতে এক সময় কৃষি কাজের সকল কলাকৌশল আয়ত্ত করে ফেলে জেসমিন। সে এখন মাঠে শুধু জমি চাষই নয়, বীজতলা তৈরি, বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপা লাগানোসহ সব কাজই করতে পারে। এরপর সে গ্রামের মানুষের কাছে জমি বর্গা নিয়ে নিজেই আবাদ করে। এখন সে ২ বিঘা জমি আবাদ করছে। এবার ২০ মণ আমন ধান পেয়েছে। বোরোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করছে ৪০ থেকে ৪৫ মণ ধান পাবে। তাছাড়া সে শাকসবজি আবাদ করছে।
জেসমিন কান্নাভেজা কণ্ঠে জানায়, বাবার অকাল মৃতু্য আর আর্থিক অনটনের কারণে কৃষি কাজের মতো কঠিন কাজগুলো তাকে করতে হচ্ছে। প্রথমে খুব কষ্ট হতো। এখন সবই আয়ত্তে এসে গেছে। সে আরও জানায়, কারও সহযোগিতা পেলে সে আবারও স্কুলে লেখাপড়া শুরম্ন করবে।
জেসমিনের মা আবেদা বেগম জানান, বসতভিটা ছাড়া আবাদি জমি নেই। স্বামীর মৃতু্যর পর সংসার এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন জেসমিনের ওপরই সংসারের ভার চলে এসেছে। জেসমিনই এখন তার সংসারের একমাত্র অবলম্বন।
_এস এম জসিম উদ্দিন, ঠাকুরগাঁও

No comments

Powered by Blogger.