শেষ সাক্ষাতকার

বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইনিং জগতে যে কজন স্বপ্রতিভ তরম্নণ তাদের স্বীয় কাজে প্রতিষ্ঠিত শাহরম্নখ শহীদ তাদের মধ্যে অন্যতম। ফ্যাশন জগতের নানাবিধ এবং ব্যক্তিগত কিছু বিষয় নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।
এ জগতে পা রাখার অনুপ্রেরণা পেলেন কোথা থেকে প্রশ্ন করতেই তিনি জানালেন পারিবারিক আবহের কারণেই কৃষ্টি কালচারের প্রতি ঝুঁকে পড়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। সেই তাগিদেই ভারতে ফাইন আর্টস নিয়ে পড়তে যাই ১৯৮৭ সালে। সেখানে ফ্যাশনের ওপর এই ডিপেস্নামা কোর্স করাকালীন ভারতীয়দের কৃষ্টি কালচার খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। ওদের সে বিষয়টি আমাকে দারম্নণভাবে নাড়া দিয়েছে, সেটি হলো দেশীয় পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা_ সর্বোপরি দেশপ্রেম। আর এ কারণেই হয়ত ওরা আজ এত এ্যাডভান্সড। কোর্স শেষ করে দেশে ফিরে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার তাগিদ অনুভব করি। নক্সীকাঁথা সংগ্রহশালা তৈরি করে নাম দিই হেনরিজ হেরিটেজ। এরপর থিমভিত্তিক কিছু কাজ শুরম্ন করি। যেমন শীতের পাখি, সোনার গাঁ শহর বাঁচাও ইত্যাদি। এসব চিত্রগুলো পোশাকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে অবশ্য কটন বেজ কাপড়ের বৈচিত্র্যতা নিয়ে কাজ করছি। কটন নিয়ে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। দেখা যায় খুব সিম্পল কাজ, তারপরেও কাপড়ের মান ভাল হওয়াতে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। এছাড়া আমি সম্পূর্ণভাবে দেশীয় কাপড় এবং কাজের সমন্বয় করে থাকি। সব সময় সচেষ্ট থাকি দেশীয় ঐতিহ্য তুলে ধরতে। আপনাদের মতো আমিও এই দেশকে অনেক ভালবাসি। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করি না আমি। আমাদের দেশে অনেক ফ্যাশন শো দেখেছি, সেগুলোতে খোলামেলা পোশাকের প্রাধান্য বেশি। কিনত্মু এসব পোশাক তো আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে পুরোপুরি বেমানান। হঁ্যা হতে পারে খুব পয়সাওয়ালা ফ্যামিলির কালচারে এসব পোশাক মানিয়ে যায়, কিনত্মু সে কালচারের অনত্মভর্ুক্ত লোকের সংখ্যা কত? আমাদের দেশের ফ্যাশনওয়ার ক্রেতার একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত। তাদের কখনই আমি খোলামেলা পোশাক পছন্দ করতে দেখিনি। তাহলে ফ্যাশন শোতে কেন পশ্চিমা পোশাক প্রাধান্য পাবে? এটা বলতে দ্বিধা নেই, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চাহিদা রম্নচি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিসত্মার করে আমাদের দেশীয় ফ্যাশন জগতকে। আমার মতে, দেশীয় প্রোডাক্টকে প্রাধান্য দিয়ে তারপর বিদেশী পোশাক প্রমোট করা উচিত। এ জন্য অনুভব করছি যোগ্য নেতৃত্বের। যে নেতৃত্ব আমাদের ঐতিহ্যের কথা বলবে দেশীয় ফ্যাশনকে পেঁৗছে দেবে বিশ্বের প্রতিটি প্রানত্মে।
এখন তো অনেক ছেলেমেয়েই ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর দিকে ঝুঁকছে; এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন? ভাল কোন বিষয়ের দিকে ঝুঁকে পড়া অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক। তবে যে ব্যাপারটি লণীয়_ এ পেশায় অনেকেই আসছেন হুজুগের বশবতর্ী হয়ে। এমন অনেকেই আছেন যারা তারকা হওয়ার উদ্দেশ্যে ফ্যাশন ডিজাইনিং-এ পড়তে আসেন। আবার অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে এ লাইন থেকে ঝরে পড়ে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ফ্যাশনের ওপর দতা অর্জন করতে হলে সবার আগে স্বকীয়তা বোধ জাগ্রত করতে হবে। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে ফ্যাশনের ওপর অনেক ডিগ্রী নিয়েও জনপ্রিয় হতে পারেনি আবার প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিা না নিয়েও ফ্যাশন জগতে প্রতিষ্ঠিত। এটা ভেতরে থেকে অনুধাবন করার বিষয়। নিজস্ব ধ্যান-ধারণা সংমিশ্রণ করেই ডিজাইন করা উচিত। তাছাড়া একজন ডিজাইনারকে সব সময় আপ-টু-ডেট থাকতে হবে। দেশীয় ঐতিহ্যের পরিবর্তনের পাশাপাশি বিশ্বের তাবৎ ফ্যাশন জগতের পরিবর্তনের খোঁজখবর রাখতে হবে। প্রতিনিয়ত নতুনত্বের সন্ধান করতে হবে। তবেই ভাল আউটপুট পাওয়া সম্ভব। অতএব যারাই আসুক এ পেশায় একটু বুঝে শুনে যেন আসে। সবার প্রতি রইল আমার আনত্মরিক অভিনন্দন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টারে গ্রম্নমিং সেশনের কাস নিয়েছেন আপনি। সেখানকার অনুভূতি কেমন?
আসলে মানুষের শেখার শেষ নেই। কাস নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেও অনেক কিছু শিখেছি। মনে হয়েছে ফ্যাশন জগতটা সত্যি অনেক বড়। শুধুমাত্র সুন্দর পোশাক পরে মডেলিং পোজ দিলেই হয় না। এই পোশাক আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রয়োজন সুন্দর হাসি, চোখের এক্সপ্রেশন, হাঁটা বা দাঁড়ানোর মোহনীয় ভঙ্গি ইত্যাদি। যার ফলে অনেক কিছুর সমন্বয় ঘটাতে হয় এখানে। প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন আইডিয়া শেয়ার করেছি ওদের সঙ্গে। ওরাও দারম্নণ স্মার্টলি রিসিভ করেছে সবকিছু।
আপনি ফ্যাশনের ওপর কোন কাস কোথাও করান কি-না জানতে চাইলে শাহরম্নখ জানান, কাস নেয়া বলতে কোন প্রতিষ্ঠানের হয়ে নয়, আমি আমার এই গ্যালারির একটি ক েবাছাইকৃত কিছু ছেলে-মেয়ে নিয়ে ৩৬ কাসের একটি ওয়ার্কশপ করাই। সপ্তাহে ৩ দিন কাস নিয়ে থাকি। বর্তমানে ফ্যাশন ডিজাইনিং-এর ওপর বেশ কিছু শিা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যা খুবই ইতিবাচক। এছাড়াও আমাদের ফ্যাশনজগকে দ্রম্নত এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য উন্নত প্রশিণের প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের হসত্মপে কামনা করছি। ভবিষ্যতে কি নিয়ে কাজ করবেন? ফ্যাশনজগতে নতুন যোগসূত্র স্থাপনের ল্যে বর্তমানে আমি হোম ফার্নিশিং নিয়ে কাজ করছি। যাতে করে মানুষ নিজেকে সাজানোর পাশাপাশি অল্প খরচে নিজের ঘরটাকেও সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে পারে। মূল্যের ব্যাপারে আমি বেশ সচেতন। সব সময়ই চেষ্টা করি মার্জিত মূল্যে ভাল কিছু যেন ক্রেতাদের দিতে পারি। আমার ডিজাইনকৃত ড্রেসগুলোর মূল্য ৬৫০ টাকা থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে রেখেছি। যাতে করে সব শ্রেণীর ক্রেতারা আমার গ্রাহক হতে পারে। ফ্যাশন ডিজাইনিং ছাড়া আর কি কি আপনার পছন্দ বা শখ?
আমি ছোটবেলা থেকেই একটি কালচারাল ফ্যামিলিতে বেড়ে উঠেছি। সে কারণে কৃষ্টি কালচারের অনেক কাছাকাছি যেতে পেরেছি। ফ্যাশন ডিজাইনিংটা বর্তমানে আমার নেশা পেশা হলেও এর পাশাপাশি আমি নাটক লিখি। গান শুনতে ও গুনগুন করে গাইতে ভাল লাগে। আরও ভাল লাগে ছবি অাঁকতে। নতুন প্রজন্ম যারা ফ্যাশন ডিজাইনিং-এ আসছে তাদের সম্বন্ধে কিছু বলুন। তাদের তো আগেই অভিনন্দন জানিয়েছি। তারপরও বলি, আমি অনেক শ্রম দিয়ে আজ এ পর্যনত্ম এসেছি। তারপরও প্রতিদিন একটু একটু করে শিখছি। অতএব ধৈর্য ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে সফলতা আসবেই।

No comments

Powered by Blogger.