চরের মানুষও স্বাস্থ্য সচেতন

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের বড়পিয়ারি পূর্বপাড়া রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এলজিএসপি প্রকল্পের সরবরাহকৃত বেঞ্চে বসে পড়ালেখা করছে।
এর আগে শিক্ষার্থীরা মেঝেতে বসে শিকের কাছে পাঠ নিয়েছে। যমুনার চর মোড়গ্রাম, ছোট পিয়ারি, বিয়াড়া ও সাপড়ি এলাকার গরিব মানুষরাও স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছে। তারা স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করছে, যা ছিল তাদের সামথ্যর্ের বাইরে। এমনকি তারা এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগতও ছিল না। এলজিএসপি'র প্রকল্পে স্যানিটারি ল্যাট্রিন সরবরাহ চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। অনত্মত এক শ' পরিবারের মধ্যে স্যানিটারি ল্যাট্রিন সরবরাহ করা হয়েছে। এভাবেই অনুভূতির কথা জানালেন উপকারভোগী মোড়গ্রাম চরের সোলেমান। প্রকল্প গ্রহণে জনঅংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নমুনাও রয়েছে এই কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নে।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভা সীমানা সংলগ্ন শহর থেকে মাত্র তিন কি.মি. দূরে কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের অবস্থান। এটি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সবচেয়ে পুরাতন ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের যোগাযোগ অবকাঠামো ভাল। মিলনায়তন, গ্রাম আদালত, পাঠাগারও রয়েছে। এই ইউনিয়নে কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়াসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও রয়েছে। সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভার শেষ সীমানার আধা কিলোমিটারের মধ্যে পাকা সড়কের পাশে অবস্থিত। এ কারণে শহরের সকল সুযোগ-সুবিধা এ ইউনিয়নবাসীর জন্য সহজলভ্য।
কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এলজিএসপি'র অধীনে ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা বর্ধিত থোক বরাদ্দ পায়। এ থোক বরাদ্দ দিয়ে ১৪টি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাসত্মবায়ন পর্যনত্ম সব কাজেই এলাকাবাসীর অংশগ্রহণ রয়েছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে নিয়ে উন্মুক্ত সভা করে সকলের মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে স্থানীয় চাহিদার আলোকে সামাজিক প্রকল্পগুলো বাসত্মবায়ন করা হচ্ছে। রাসত্মাঘাট, শিা প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, ড্রেন, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন বিতরণের মাধ্যমে এ ইউনিয়নে এলজিএসপি'র কার্যক্রম ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। উপকারভোগী আব্দুর রশীদ, নজরম্নল ইসলাম, তৌফিক , কোরবান আলী, আব্দুর রহিমসহ অনেকেই বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের এমন সহায়তা এবং বাসত্মবায়ন পদ্ধতি গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছে। তাঁরা আরও বলেন, বিগত ২ বছর যাবত এ এলাকার উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক অর্থ প্রদান করছে এবং এ অর্থের মাধ্যমে জনগণের পরামর্শ নিয়েই ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন কর্মকা- বাসত্মবায়ন করছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে এলজিএসপির অধীনে দু'কিসত্মিতিতে প্রাপ্ত টাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থানীয় চাহিদার আলোকে ১৪টি স্কিম বাসত্মবায়ন করা হয়েছে। তবে এলজিএসপির অধীনে বরাদ্দকৃত টাকায় প্রতিটি স্কিম বাসত্মবায়নের েেত্র রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, স্থানীয় চাহিদার আলোকে জনঅংশগ্রহণের ভিত্তিতে প্রকল্প নির্বাচন ও কাজ সম্পাদন করতে হয় বলে ছোট ছোট স্কিম বাসত্মবায়ন করা হয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ ইউনিয়নে এলজিএসপির বরাদ্দ প্রথম কিসত্মিতে ৪ লাখ ৫০ হাজার ৮শ' ৩৩ টাকায় ৬টি প্রকল্পের কাজ শুরম্ন হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতুর শহর বাইপাস সড়কের ৬নং ওয়ার্ডের পাইকপাড়ার সৈয়দ আলীর বাড়ি থেকে হবি'র দোকান পর্যনত্ম এক হাজার ফুট মাটির রাসত্মা নির্মিত হওয়ায় নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের যোগাযোগের েেত্র কষ্ট লাঘব হয়েছে বলে নজরম্নল ইসলাম জানালেন। মাটির রাসত্মাটি নির্মাণের ফলে এ এলাকার মানুষের উপকারের কথা স্বীকার করে আব্দুর রশীদ জানান, বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে যাতায়াতে কষ্ট হয়েছে। প্রায় আধা কি.মি. সড়ক ঘুরে যেতে হয়েছে। এখন আর কষ্ট হয় না। বড় পিয়ারি পূর্বপাড়া বেসরকারী রেজি. প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক এসএম মহসিন আলী জানান, বিদ্যালয়ে দু'শিফটে প্রায় ৫ শ' শিার্থী পড়ালেখা করে। শিার্থীদের বসার জন্য সীমিত সংখ্যক বেঞ্চ ছিল। প্রায় দিনই ছাত্র-ছাত্রীরা মেঝেতে বসে কাস করেছে। এলজিএসপি'র বরাদ্দকৃত টাকায় বেঞ্চ সরবরাহ করায় শিার্থীদের পড়ালেখায় সুবিধা হয়েছে। প্রকল্প বাসত্মবায়ন কমিটির সভাপতি ও ২ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সবুর বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ আছে বলেই কম টাকায় অনেক বড় কাজ করতে পারছি। এলজিএসপি প্রকল্পের নিয়ম-কানুন ও দিক নির্দেশনার প্রশংসা করে কালিয়া হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বয়সে তরম্নণ ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব মিজানুর রহমান বলেন, এলজিএসপি প্রকল্পে কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
_বাবু ইসলাম, সিরাজগঞ্জ

No comments

Powered by Blogger.