আজ প্রধানমন্ত্রীর পাবনা সফর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পাবনা সফর করবেন। বর্তমান সরকার মতা গ্রহণের পর এটিই প্রধানমন্ত্রীর পাবনায় প্রথম সফর।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি স্থাপনা ও প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সকালে তিনি বেড়ায় ৫২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়া পিকিং বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌরসভা ভবন উদ্বোধন শেষে এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখবেন। দুপুরে সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভাস্থলের পাশে তৈরি অপর একটি মঞ্চে স্থাপিত প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পাবনা শহরে পাবনা মেডিক্যাল কলেজ ও রেল লাইনসহ অন্যান্য স্থাপনা উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পর ভাষণ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর এবং জনসভা সফল করার জন্য প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। জেলা পরিষদের সৌজন্যে প্রকাশ করা হয়েছে সরকারের চার বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পোস্টার।

নিরাপত্তা পাস না দেয়ায় সাংবাদিকদের ক্ষোভে
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থলসহ অনুষ্ঠানমালার খবর সংগ্রহের জন্য পাবনায় কর্মরত জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্র এবং রেডিও-টেলিভিশনের সাংবাদিকদের প্রেস কার্ড বা নিরাপত্তা পাস দেয়া হয়নি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ােভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রেস কার্ড প্রদানের জন্য পাবনা প্রেস কাবসহ বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকেরা পুলিশ প্রশাসনকে তালিকা প্রদান করেন। এর পর পুলিশ প্রশাসন থেকে জেলা তথ্য কর্মকর্তার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার কথা বলা হলে যথারীতি তা সম্পন্ন করা হয়। এর পর সাংবাদিকদের জন্য ইস্যু করা হয় নিরাপত্তা কার্ড। ইস্যুকৃত কার্ড সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণও করা হয়। কিন্তু পরে নিরাপত্তা কার্ডগুলো সাংবাদিকদের কাছ থেকে আবার ফেরত নেয়া হয় এবং সাংবাদিকদের জানানো হয় তাদের নিরাপত্তা কার্ড দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর পরামর্শ মোতাবেক স্থানীয় সাংবাদিকদের কোনো প্রেস কার্ড দেয়া হচ্ছে না। এ েেত্র তার কিছু করার নেই বলে তিনি জানান। এ দিকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পাস দেয়া হচ্ছে নাÑ এ খবর জানার পর তাদের মধ্যে তীব্র ােভ ছড়িয়ে পড়ে।

বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেড়া আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বেড়ায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এ দিকে প্রধানমন্ত্রী তথা দলীয় প্রধানের আগমনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছে।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী বেড়ায় নির্মিত ৭০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট ও বেড়া পৌরসভায় নবনির্মিত পৌর ভবনের উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া বেড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন।

অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বেড়াবাসীর প থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেড়াকে জেলায় উন্নীতকরণ, শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী বেড়া বি বি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ও অর্ধশতাধিক বছরের পুরনো বেড়া কলেজকে সরকারিকরণ, বেড়া ডাকবাংলো থেকে শাহজাদপুরের চরবর্ণিয়া পর্যন্ত হুড়াসগর নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ, বেড়া হাসপাতাল ২০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, বেড়ায় শিল্পপার্ক, পৌর বাস টার্মিনাল, পৌর শিশুপার্ক, গ্রোথ সেন্টার সাতটি স্থাপনার দাবি তুলে ধরা হবে।

সিরাজগঞ্জে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করবেন

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিরাজগঞ্জে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন আজ। দুই মাস আগেই এর পরীামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে। এটি চালুর মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে আরো ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর ফলে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা সফরে যাওয়ার পথে সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে সয়দাবাদে ওই বিদ্যুৎ প্লান্ট এবং উল্লাপাড়ায় করতোয়া নদীর ওপর ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছোনতলা ব্রিজের উদ্বোধন করবেন।

সয়দাবাদে যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে ১০ একর জমির ওপর প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। গ্যাস ও ডিজেল উভয় জ্বালানিতেই চলবে এটি। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার মতায় এলে সিরাজগঞ্জ সদর আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য  ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হয়ে সয়দাবাদে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারিভাবে ১০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করেন। মাটি ভরাট ও প্রাথমিক অবকাঠামো নির্মাণের পর ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারিতে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। সে সময়ই ওই বিদ্যুৎ প্লান্ট থেকে জাতীয় গ্রিডে দেয়ার জন্য যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে বিদ্যুৎসঞ্চালন লাইনের কাজও সম্পন্ন করা হয়। এরপর মতার পালাবদল হয়। পরে আওয়ামী লীগ মতায় এলে থেমে যায় প্রকল্পের কাজ। পরে ৩০০ মেগাওয়াটের পরিবর্তে আগের প্রকল্পস্থলেই ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে বর্তমান সরকার। এরপর গত বছরের ৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই দেশী-বিদেশী প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ হয় গত বছরের ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে। কেন্দ্রটিকে এক বছরের মধ্যে কম্বাইন্ড সাইকেলে পরিণত করে আরো ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদুল আলম জানান। বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির অর্থায়নে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হলে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

সোনতলা সেতু উদ্বোধন

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়াবাসী প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। উল্লাপাড়ার হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে তালগাছি পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মহাসড়ক ছেয়ে গেছে সুদৃশ্য তোরণ ও শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ও স্থানীয় এমপি শফিকুল ইসলামের প্রতিকৃতিখচিত বিশাল রঙ-বেরঙের ব্যানারে। উল্লাপাড়ার সর্বত্র এখন বর্ণিল সাজে সজ্জিত। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে উল্লাপাড়াকে। আজ বেলা ১১টায় উল্লাপাড়া সোনতলায় করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত সোনতলা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু উদ্বোধনের পর সেতুসংলগ্ন বিশাল চত্বরে বক্তব্য রাখবেন। আজ উদ্বোধনের পর থেকে জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হবে।

তাঁতশিল্পসমৃদ্ধ বেলকুচি ও এনায়েতপুর উপজেলার সাথে উল্লাপাড়া উপজেলার ব্যবসায়, শিাসহ সার্বিক উন্নয়নের সেতুবন্ধন সোনতলা সেতু এখন স্বপ্নের বাস্তবায়নে। প্রতিষ্ঠান মীর আকতার ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র দুই বছরে ৩৪৭.২৯৫ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করে।

No comments

Powered by Blogger.