শিক্ষা-প্রাথমিক শিক্ষকদের যৌক্তিক প্রত্যাশা by মো. সিদ্দিকুর রহমান

বর্তমান সরকারের চার বছরের সবচেয়ে বেশি সাফল্য প্রাথমিক শিক্ষায় বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের জাতীয়করণ, বিনামূল্যে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমাপনী পরীক্ষা চালু ও সাফল্যজনকভাবে সমাপ্ত, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার, শিক্ষানীতির আলোকে ষষ্ঠ শ্রেণী খোলা, আরও অনেক সফলতা আছে।
বিগত সরকারের আমলে বিনামূল্যে অর্ধেক বই নতুন দেওয়া হতো। এ প্রসঙ্গে আমি নতুন বইয়ের সঙ্গে পুরনো বই বিতরণকে হোটেলে একই তেলে বারবার পুরি ভাজার তুলনা করেছিলাম। বর্তমানে শিশু শিক্ষার পরিবেশ আশানুরূপ পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকরা আগের মতো এসএসসি, এইচএসসি যোগ্যতাসম্পন্ন নন। এখন প্রায় শতভাগই স্নাতক, স্নাতকোত্তর, মাস্টার্স এবং প্রধান শিক্ষকের অধিকাংশই মাস্টার্স। অথচ প্রধান শিক্ষকদের ৩০ বছর আগের গেজেটেড মর্যাদার দাবি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। আজকের প্রেক্ষাপটে যেখানে সব শিক্ষকের গেজেটেড মর্যাদা দেওয়ার দাবি যৌক্তিক, সেখানে প্রধান শিক্ষকদের গেজেটেড মর্যাদা দেওয়ার জন্য এত দীর্ঘ সময় চিন্তাভাবনা ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয়। বিগত সরকারের আমলে শিক্ষকদের আন্দোলনে ঝিনাইদহে বাস দুর্ঘটনায় শিক্ষক নিহত হওয়ার ভয়াবহ স্মৃতি হৃদয়পটে ভেসে আসছে। আরও মনে পড়ছে, আমার হাজতবাসের নিদারুণ কষ্টের অভিজ্ঞতা। আজও শিক্ষকরা নিম্নমানের স্কেলে কর্মরত। ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ। কারও যেন এ বিষয়টি অনুধাবনের মতো সময় নেই। বর্তমান সরকারের ঘোষিত প্রতিশ্রুত স্বতন্ত্র বেতন স্কেল শিক্ষক সমাজের কাছে আরেকটি শুভঙ্করের ফাঁকি। স্বতন্ত্র বেতন স্কেল হলে শিক্ষকদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। আজকের দিনে শিক্ষক সমাজের দাবি স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নয়, সন্তোষজনক বেতন স্কেলসহ সহকারী শিক্ষক থেকে শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পরিচালক পর্যন্ত পদায়ন করা। এর মাধ্যমেই প্রাথমিক শিক্ষা হয়ে উঠবে শিক্ষাবান্ধব। এতে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা অভিজ্ঞ শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের তদারকি লোপ পাবে। একদিকে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি দ্বারা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন পরিচালিত হবে; অন্যদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০ শতাংশ নারী শিক্ষক বিধায় পদোন্নতির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পাবে। এ প্রসঙ্গে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলতে শোনা যায়_ শতভাগ পদোন্নতি নিয়োগবিধি পরিপন্থী। এক্ষেত্রে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য, প্রাথমিক শিক্ষাকে মানসম্মত করার জন্য নিয়োগবিধি পরিবর্তন করা কি দুরূহ কাজ? প্রাথমিক শিক্ষাকে মানসম্মত করার লক্ষ্যে শতভাগ পদোন্নতি সুপারিশ করা কি অযৌক্তিক? ১১ জানুয়ারি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় জেলার ২০৩ নেতার মতবিনিময় সভায় সচিব চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক আর্থিক দাবিগুলো ঘোষণা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। সচিব আরও আশ্বস্ত করেন, আর্থিক ছাড়া বাকি সমস্যাগুলোও শিগগিরই সমাধান করবেন। শিক্ষক সমাজ এক বুক আশা নিয়ে এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এই আশার আলো যেন হতাশায় পর্যবসিত না হয়। সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে ৩০ লাখ শিক্ষক পরিবার সদস্যের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সরকারের পক্ষে নবউদ্দীপনা জাগ্রত হবে। শিক্ষক পরিবার উপকৃত হবে এবং সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে সরকার।

মো. সিদ্দিকুর রহমান :সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি

No comments

Powered by Blogger.