ট্রেনে ডাকাতি-যাত্রী-নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে

ট্রেনে আবারও ঘটেছে ডাকাতির ঘটনা। গত বছর গাজীপুর এলাকায় ডাকাতির ঘটনার পর মনে করা হয়েছিল, রেলপথে যাত্রী-নিরাপত্তাব্যবস্থা দৃঢ়তর হবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার আখাউড়া থেকে ঢাকার পথে ছেড়ে আসা তিতাস কমিউটার ট্রেনটি চালু থাকাকালে পাঁচ যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয় ডাকাতদল।
যাঁদের তিনজনই প্রাণ হারিয়েছেন বৃহস্পতিবার। ডাকাতির ঘটনা নিছক ডাকাতির জন্যই ঘটেছে কি না, এমন সন্দেহও দেখা দিতে পারে। কারণ ডাকাতি চলাকালে যাত্রীরা কেউ ডাকাতদের প্রতিরোধ কিংবা আত্মরক্ষার চেষ্টা করেননি। তার পরও তাঁদের কোন কারণে চলন্ত ট্রেন থেকে গামছা কিংবা মাফলার পেঁচিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হবে, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা ছিল কম। সেই তুলনায় বগির সংখ্যা ছিল বেশি। অথচ পুলিশ ছিল মাত্র তিনজন। কর্তৃপক্ষ যাত্রীর সংখ্যাস্বল্পতার কারণে বগি কমিয়ে নিলে তিনজন পুলিশের পক্ষেই নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব হতো। তারা সে দিকটি বিবেচনা করেনি বলেই মনে হয়।
কমিউটার ট্রেনটি ওই এলাকার মানুষের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করতে চালু হয়েছিল এলাকার মানুষের দাবির সুবাদে। কিন্তু গাড়ির অবস্থা ও নিরাপত্তা সুবিধা নিশ্চিত করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের পরিবর্তনের ধারায় এখন এক বগি থেকে আরেক বগিতে যাতায়াত সুবিধা অধিকাংশ ট্রেনে বিদ্যমান। কিন্তু পুরনো বগির গাড়িগুলোতে সেই ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি। যে কারণে এসব গাড়িতে নিরাপত্তাহীনতা থেকেই গেছে। এক বগি থেকে অন্য বগিতে যাতায়াতের ব্যবস্থা যেহেতু অনুপস্থিত, তাই সেই গাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বেশি থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তিতাস কমিউটার ট্রেনটিতে মাত্র তিনজন পুলিশ সদস্য কর্মরত ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, গাড়িতে কর্মরতরা নিজ গাড়িতে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনার খবরও টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রথম জানতে পেরেছেন। এতেই বোঝা যায়, ওই গাড়ির যাত্রীদের নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা নাজুক পর্যায়ে ছিল।
আখাউড়া-ঢাকা রুটের পাঘাচং স্টেশনে আগেও এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে এখানকার নিরাপত্তা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল। প্রয়োজনে পুরনো স্টেশন হওয়ার পরও বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে পাঘাচং স্টেশনে গাড়ির বিরতি বন্ধ করা দরকার ছিল। ঘটনা থেকে প্রমাণ হয়, সেখানে তা নেওয়া হয়নি।
তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে রেলওয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে। রেলওয়ের এমন দুর্ঘটনার পর অনেক তদন্ত কমিটি আগেও গঠিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না। যে জন্য জানা যায় না দুর্বলতা কিংবা অবহেলা নিরসনে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সে সম্পর্কেও। তিনজন যাত্রীর প্রাণহানিই যদি হয় শেষ সংবাদ, তাহলেই বোঝা যাবে প্রকৃতই টনক নড়েছে রেলওয়ের। সাধারণ মানুষের সহজ চলার পথটি নিরাপদ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। যাত্রীসেবার মান উন্নত করা হোক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.