বলতে চাই- নারী দিবসে স্বাবলম্বী হওয়ার অঙ্গীকার

জসিম সাহেবের মেয়ের বিয়ে। আসবাবপত্র, ফ্রিজ, টিভি থেকে শুরু করে নগদ টাকাও পাত্রকে দিলেন। একজন বললেন, যৌতুক দিলেন মেয়ের জামাইকে? জসিম সাহেব অস্বীকার করলেন।
যৌতুক না মশাই। একমাত্র মেয়ে। তাকেই উপহার দিলাম। যৌতুক কেন দেব, বলুন! যৌতুক কেন দেবেন তা তিনি নিজেই ভাল জানেন। তবে তাঁর মতো বাবাদের এই যে উপহার দেবার প্রবণতা তা যে সমাজের সর্বসত্মরে ছড়িয়ে পড়ছে, তা কি তিনি ভেবে দেখেছেন? যাদের সামর্থ্য নেই গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো উপহাররূপী যৌতুক চেপে বসে থাকে। উপহার বলুন আর যৌতুকই বলুন, কন্যাদায়গ্রসত্ম বাবার তা দেয়ার সার্মথ্য থাকে না। ফলে লাঞ্ছনা আর গঞ্জনার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয় বিবাহিত মেয়েটির জীবন।
বাংলাদেশের অবস্থাপন্ন লোকদের উপহাররূপী এই সব যৌতুক দেবার ফলে যৌতুক পাবার ৰেত্রে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। দিনমজুর বাবা, যার নুন আনতে পানত্মা ফুরায় অবস্থা তার কী সাধ্য মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দেয়ার? যে মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল যৌতুক দেয়ার অঙ্গীকার করে, যৌতুক না দেয়ায় বিয়ের ৪০ বছর পরও তার থেকে নিসত্মার পাওয়া যায়নি। এমনি একটি ঘটনা ঘটে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানপাড়া গ্রামে। স্বামী নাসিরউদ্দিন হাওলাদার। স্ত্রী রাশিদা বেগম বিয়ের ৪০ বছর পর স্বামী কতর্ৃক ঘরছাড়া হয়। নাসিরউদ্দিন রাশিদার পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে ২৫ হাজার টাকা দেবার জন্য চাপ দেয়। রাশিদার পৰে তা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় রাশিদার অনুমতি ছাড়া নাসিরউদ্দিন দ্বিতীয় বিয়ে করে এবং রাশিদাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
কী নির্মম আর নিষ্ঠুর এই আচরণ! ৪০টি বছর যে মহিলা তার ভালবাসা আর একাগ্রতা দিয়ে সংসারকে আগলে রাখল, তার জীবন-যৌবন উৎসর্গ করল সংসারের মায়াজালে, কী অবলীলায় স্বামী তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়! যৌতুক প্রথা সরাসরি এবং অনেক ৰেত্রে ছদ্মাবরণে টিকে আছে সমাজে। ফলে নারীরা যৌতুকের নামে সহিংসতা ও অবমাননাকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। যৌতুক বিষয়টি অত্যনত্ম পুরনো। কিন্তু এই পুরনো বিষয়টির প্রয়োগ খুবই ভয়ঙ্কর। এক রাশ স্বপ্ন নিয়ে যে মেয়েটি নতুন সংসারে পা রাখে, যদি যৌতুক দেয়ার অঙ্গীকারে বিয়ে হয়, এবং যৌতুক দিতে না পারে তাহলে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে পরিবারের সদস্যদের অত্যাচারে। আর এই জ্বালা সইতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যার মতো কঠিন কাজটি করে বসে।
আইন করে যৌতুক বন্ধ করা যাবে না। বরং সর্বৰেত্রে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ বাড়লেই নারী নিজেই এর বিরম্নদ্ধে রম্নখে দাঁড়াতে পারবে। নারী কারও মুখাপেৰী নয়। সে যদি তার নিজের ভরণপোষণ নিজেই চালাতে পারে তাহলে পাত্র হিসেবে কাউকে অপছন্দ করার অধিকার রাখে। আর একজন স্বাবলম্বী মেয়ে সে নিজেই তো স্বামীর কাছে একটি যৌতুক। মেয়ের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ভাল চাকরিজীবি স্বামী খোঁজার চেয়ে নিজেকেই স্বাবলম্বী বানানো উচিত। এই স্বাবলম্বী শুধু আর্থিক দিক দিয়ে নয়, বরং এতে সংসার তথা সমাজে তার মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং অধিকার অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। স্বার্থক হবে নারী দিবস, নারী আন্দোলন।

No comments

Powered by Blogger.