চুক্তি বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করতে হবে-পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি

দেরিতে হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার যে সময়সূচিভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইতিবাচক হলেও সেখানকার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। চুক্তি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিক চেষ্টা থাকা যেমন জরুরি তেমনি শান্তিপূর্ণ পরিবেশও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।


১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সই হলেও গত ১২ বছর এর অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়ন না হওয়া দুঃখজনক। ফলে সেখানে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা কখনো কখনো সংঘাত-সংঘর্ষেও রূপ নিচ্ছে। পাহাড়ি-বাঙালি কিংবা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর দুই গ্রুপের মধ্যে যে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে, তার মূলেও চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া সংক্রান্ত ক্ষোভ।
চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় বিরোধীরা এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে পারছে। এসব সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি চুক্তি বাস্তবায়নের অনুকূল বলেই আমাদের ধারণা। ইউপিডিএফ আগে চুক্তির বিরোধিতা করলেও বর্তমানে সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে। তারা জানিয়েছে, চুক্তি বাস্তবায়িত হলে তাদের আপত্তি নেই। অন্যদিকে সেখানে বসবাসকারী বাঙালিদের যে অংশ সম-অধিকারের নামে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালিয়ে আসছিল, তারাও হালে পানি পাচ্ছে না।
এ অবস্থায় সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও জনসংহতিসহ সংশ্লিষ্ট সবারই কর্তব্য হবে চুক্তি বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়া। ভূমি জরিপ ও ভূমি কমিশনের এখতিয়ার নিয়ে সরকার ও জনসংহতির মধ্যে যে বিরোধ আছে, আলোচনার মাধ্যমে তা মীমাংসা করা কঠিন নয়। স্বীকার করতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিরোধের মূলে রয়েছে ভূমি সমস্যা। এর সুষ্ঠু ও যুক্তিসংগত সমাধান না করে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা যাবে না।
সে ক্ষেত্রে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তিসহ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী যে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছেন, তা যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল। সংকীর্ণ গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে এর বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.