ক্ষুব্ধ নিউইয়র্কের ক্যাবিরা by ইসরাত জাহান

বড় শহরের রাস্তায় চলাফেরা করায় তাঁদের ভাবসাব বিশাল হলেও, নিউইয়র্কের ইয়োলো ক্যাবচালকদের সততার সুনাম আছে। যাত্রীদের টাকা-পয়সা, গয়নাগাটি পেয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা প্রায়ই খবর হয়। সেই ক্যাবিদের সুনামের সফেদ জমিনে একটু দাগই পড়ল এবার। অভিযোগ বেশি ভাড়া নেওয়ার।


বহু লোকের ভ্রু কপালে তুলেছে এই কাহিনি। ট্যাক্সিচালকেরা অবশ্য ওই অভিযোগকে ঢালাও বলে তা পুরোপুরি মানতে অস্বীকার করেছেন।
নিউইয়র্কের ক্যাবচালকদের ‘দুই নাম্বারির’ বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে সেখানকার ট্যাক্সি সার্ভিস নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘লিমুজিন অ্যান্ড ট্যাক্সি কমিশন’। কমিশন অভিযোগ করেছে, গত দুই বছরে মহানগরের ক্যাবচালকেরা ২০ লাখের মতো ট্রিপে মোট ৮০ লাখ ডলারেরও বেশি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছেন আরোহীদের কাছ থেকে। খুব সহজেই তাঁরা এ কাজ করেছেন। নিউইয়র্কে ক্যাব ভাড়ার দুটি রেট। মূল শহরের মধ্যে এক রকম রেট, আর শহরের উপকণ্ঠ এলাকায় আরেক রকম। দ্বিতীয় রেটটি প্রথমটির চেয়ে বেশি। বলা হচ্ছে, এ সুযোগটিই নিয়েছেন অনেক চালক। তাঁরা অনেকেই গাড়ি চালানো শুরু করার পর মিটারের সুইচ শহরের বাইরের রেটে সেট করে দেন। কমিশন জানিয়েছে, নিউইয়র্কের ৩৬ হাজার ট্যাক্সিচালকের মধ্যে তিন হাজারই নিয়মিত এ ধরনের অনিয়ম করেছেন। রেকর্ড বলছে, দুঃসাহসী একজন চালক এ কর্মটি করেছেন ৫৭৪ বার। বলাবাহুল্য, তাঁর লাইসেন্সটি চিরতরে গেছে।
তবে ক্যাবচালকেরা এই অভিযোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। এ নিয়ে শুনানিতে নিজেদের যুক্তিও তুলে ধরেছেন তাঁরা। পরে সব বিশ্লেষণ করে কমিশনও তাদের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে। তারা এখন বলছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের যত অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রকৃত সংখ্যা অত বেশি নয়। তা ছাড়া বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ঘটনা ঘটেছে মিটারের ভুলের জন্য। আর শহরের বাইরের রেটে মিটার সেট করার যে অভিযোগ আছে, অনেক ক্ষেত্রেই তা চালকেরা করেছেন গন্তব্যে পৌঁছানোর পর মাত্র!
পাশাপাশি এ আভাসও পাওয়া গেছে, যেসব ট্যাক্সিচালককে গাড়ির লিজের টাকা শোধ করতে চড়া কিস্তি দিতে হয়, তাঁরাই মূলত আরোহীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
অনিয়ম ঠেকাতে কমিশন এখন গাড়িতে আরও কার্যকর যন্ত্র লাগাতে চায়। এ যন্ত্র বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলে যাত্রীদের সতর্ক করবে।
বিবিসির একজন প্রতিবেদক সম্প্রতি বের হন ব্যাপারটার সুলুকসন্ধান করতে। তাঁর সঙ্গে কথা হয় নিউইয়র্কে ৩৫ বছর ধরে ক্যাব চালানো বেরেসফোর্ড সিমন্সের সঙ্গে। সিমন্স তাঁর অভিজ্ঞতার প্রমাণ দিতে গিয়ে সাংবাদিককে জানান, খোদ জ্যাকুলিন ওনাসিস (প্রেসিডেন্ট কেনেডির স্ত্রী) তাঁর ট্যাক্সিতে চড়েছেন। কমিশনের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি। প্রধান যুক্তি, প্রতিটি গাড়ির গতিবিধি নজরদারির জন্য জিপিএস যন্ত্র রয়েছে। এর পরও এ ধরনের অভিযোগ আনতে কমিশনের দুই বছর সময় লাগে কেন? সিমন্সের মতে, কোনো চালক ধরা পড়বে জেনেও যদি এ ধরনের অনিয়ম করেন, তবে তা বোকামি ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
সিমন্স স্বীকার করেন, কিছু দুর্নীতিপরায়ণ চালক থাকতেও পারেন। তবে গয়রহভাবে সবাইকে দোষারোপ করা উচিত নয়। ট্যাক্সিগুলোতে মিটার বসানোর পদ্ধতিও ত্রুটিপূর্ণ বলে দাবি করেন তিনি।
বিবিসির একজন প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখতে ১০-১২টি ট্যাক্সিতে চড়ে নিউইয়র্কের এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ান। তাঁর মনে হয়েছে, মোটামুটি ধারাবাহিকতা ছিল সবার ভাড়ার হারে। তবে প্রতিবেদকের মন্তব্য, এটা অভিযোগ ওঠার পর মানুষ সতর্ক হয়ে গেছে, নাকি স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে, তা বোঝার আর উপায় নেই।

No comments

Powered by Blogger.