তাঁর কর্ম ও সাধনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে-বিদায় অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ

উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, আইনসভা ইত্যাদির পাশাপাশি যে আরেকটি শক্তি গণতন্ত্রের বিকাশে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে, তা হলো নাগরিক সমাজ বা সিভিল সোসাইটি। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ছিলেন নাগরিক সমাজের এমন একজন প্রতিনিধি, যিনি সমাজের এই গণতান্ত্রিক শক্তির স্বাধীন বিকাশের প্রত্যাশী ছিলেন। নিজের বহুমুখী কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে সেই স্বাক্ষর তিনি রেখে গেছেন।


মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ৭৬ বছর বয়সে তাঁর কর্মময় জীবনের অবসান ঘটে। বলা চলে, জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন সচল চিন্তার একজন কর্মতৎপর মানুষ। তাঁর জীবনাবসানে বাংলাদেশের বিরাট ক্ষতি হলো, যে ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয়। এমন প্রজ্ঞাবান, দায়িত্বনিষ্ঠ, উদ্যমী, উদ্যোগী, নীতিপরায়ণ ও দৃঢ়চেতা কর্মতৎপর মানুষ আমাদের সমাজে বিরল।
তিনি ছিলেন অর্থনীতির মানুষ; দীর্ঘ সময় অধ্যাপনা করেছেন দেশের প্রধান উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থনীতির তত্ত্বীয় দিকগুলোর পাশাপাশি এই শাস্ত্রের প্রায়োগিক দিকের প্রতিও তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন আর্থিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাসহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ), ব্যবসায় প্রশাসন শিক্ষায় যেটি আজ বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বনামখ্যাত, সেটির প্রতিষ্ঠায় মোজাফ্ফর আহমদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষজ্ঞ ছিলেন অর্থনীতিতে, কিন্তু তাঁর দৃষ্টি ছিল আরও প্রসারিত। তিনি রাষ্ট্র ও সমাজজীবনের প্রতি তাকিয়েছেন সামগ্রিক দৃষ্টি নিয়ে। তাই আমরা তাঁকে দেখতে পেয়েছি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবাধিকার, পরিবেশ রক্ষা, দুর্নীতি দমন, স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, নির্বাচনী ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটানোর লক্ষ্যে পরিচালিত নানা উদ্যোগে ও আন্দোলনে। তিনি কাজ করেছেন যেমন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অংশ হয়ে, তেমনি স্বাধীন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবেও। ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, আবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মতো নাগরিক সমাজের সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।
প্রজ্ঞাবান শিক্ষক ও দেশ-জাতির কল্যাণে নিবেদিত কর্মপ্রাণ অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের কর্মময় জীবনের দৃষ্টান্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পাথেয় হোক; শুধু তবেই তাঁর প্রতি আমাদের যথাযথ শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে, এভাবেই তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে রইবেন।

No comments

Powered by Blogger.