চার জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণ গেল ২০ জনের

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, রাজশাহীর পুঠিয়া, টাঙ্গাইলের কালিহাতী ও হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় গতকাল বুধবার সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লাপাড়ায় বাস খাদে পড়ে নয়জন, পুঠিয়ায় পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষে পাঁচজন এবং কালিহাতী ও বাহুবলে ট্রাকের চাপায় তিনজন করে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ধান কাটার শ্রমিক।


ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সিরাজগঞ্জ: দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে উল্লাপাড়ার রানীনগরে নগরবাড়ী-বগুড়া মহাসড়কে সিরাজগঞ্জ থেকে পাবনাগামী এম কে পরিবহনের একটি বাসের চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। বাসটি সড়কের পাশের তিনটি গাছ ভেঙে খাদে পড়ে যায়। বাসের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নয়জন মারা যান। আহত হন অন্তত ২০ জন।
খবর পেয়ে হাইওয়ে থানার পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন। আহত ব্যক্তিদের উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ঝাপড়া পবিরাম গ্রামের আইয়ুব আলী (৩২) ও শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা ইউনিয়নের মো. আবদুল জলিল প্রামাণিক (২৫), বগুড়ার ধুনট উপজেলার কুড়িগাতী গ্রামের চাঁদ মোহাম্মদ (৩৬), আলম মিয়া (৩০), গোলাম হোসেন (২২), মো. আবদুর রাজ্জাক (২০) ও শাহ আলম (৩০) এবং বাসচালকের সহকারী পাবনার বলরামপুর গ্রামের মো. বাবুল শেখ ও দক্ষিণ রাঘবপুর মহল্লার শরিফুল ইসলাম (২৫)। বাবুল ও শরিফুল ছাড়া অন্যরা শাহজাদপুর উপজেলা ও পাবনা জেলায় ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে কাজে যাচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনায় আহত যাত্রী মেনাজ উদ্দীন বলেন, ‘রাস্তার ওপর ধানের খড় বিছানো ছিল। এর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বাসটি পিছলে যায়। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই।’
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দীন বলেন, বাসটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে বাসটি রাস্তার পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে খাদে পড়ে যায়। এ ঘটনায় সলঙ্গা থানায় মামলা করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
রাজশাহী: পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পুঠিয়ার শিবপুর এলাকায় রাজশাহীগামী পত্রিকাবাহী পিকআপ ভ্যানের সঙ্গে নাটোরগামী বালুবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে পিকআপের চালক জহিরুল ইসলামের (৩০) মৃত্যু হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান পিকআপ ভ্যানের চার যাত্রী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ব্যবসায়ী নিশান (৩৫) ও নাটোরের বড়াইগ্রামের আবু বক্কার (৭০)। অপর দুজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনায় ট্রাকের আট শ্রমিক আহত হলে তাঁদের পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকচালক গাড়ি ফেলে পালিয়ে যান। এ সময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে। এতে প্রায় এক ঘণ্টা রাজশাহী-নাটোর সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে।
পুঠিয়া থানার ওসি শেখ আতিয়ার রহমান বলেন, পিকআপ ভ্যানচালকের লাশ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপর চারজনের লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। এ ব্যাপারে দুর্ঘটনার মামলা করেছে হাইওয়ে পুলিশ।
টাঙ্গাইল: ভোর ছয়টার দিকে কালিহাতীর সল্লায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তের সংযোগ সড়কে ট্রাকের চাপায় টেম্পোর চালকসহ তিনজন নিহত হন। আহত হন তিনজন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন টেম্পোর চালক কালিহাতীর কুর্শাবেনু গ্রামের মানিক (২৫), গোহালিয়াবাড়ি গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী (৫০) ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার আবদুল্লাহ (২২)। আবদুল্লাহ ধান কাটার কাজে এলেঙ্গা যাচ্ছিলেন। আহত ব্যক্তিদের টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি ইউনুস আলী মিয়া দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাহুবল (হবিগঞ্জ): বাহুবলের হাবিজপুর প্রকাশিত চারগাঁও গ্রামের তিন শ্রমিক স্থানীয় নিউ সাগর ব্রিকফিল্ডে কাজে যোগ দিতে বাড়ি থেকে হেঁটে রওনা হন। ভোর পাঁচটার দিকে উপজেলার তুগলী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঢাকাগামী একটি পাথরবোঝাই ট্রাক ফুটপাতে উঠে ওই শ্রমিকদের চাপা দিয়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলে শামছুল (২৮) ও লাল মিয়ার (৩০) মৃত্যু হয়। গুরুতর আহতাবস্থায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয় সফর আলীর (২৫)।
দুর্ঘটনার পর পরই ট্রাক ফেলে পালিয়ে যান চালক। খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামের লোকজন ও শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। এতে মহাসড়কের দুই পাশে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা ঘটনাস্থলে গিয়ে জনতাকে শান্ত করেন। সকাল সাতটার দিকে জনতা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

No comments

Powered by Blogger.