শ্রদ্ধাঞ্জলি-আলোকিত মানুষের বিদায়

একজন আলোকিত মানুষ প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে বিদায় নিলেন। মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সুশাসন ও সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অগ্রদূত অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ মৃত্যুর হিমশীতল কোলে ঢলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন এ দেশের দীর্ঘ ও কণ্টাকাকীর্ণ নাগরিক আন্দোলনের প্রজ্বলিত দীপশিখায় বাতাসের আচমকা ঝাপ্টা লাগল।


অবসান হলো এক মহাপ্রাণের, যিনি নাগরিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ছুটে চলছিলেন বিরামহীনভাবে। দেশের স্বাধিকার আন্দোলনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণকারী মানুষটির এভাবে আমাদের পরিচিত দুনিয়া থেকে চিরকালের জন্য হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক হলেও নাগরিক সমাজের কাছে তা বজ্র হানার মতো। এ দেশের নাগরিক আন্দোলন একপা-দু'পা করে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যে নির্দিষ্ট অবয়ব ও মাত্রা পেয়েছে, তার পেছনে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের অবদান অতুলনীয়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) মতো সামাজিক ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ব্যাপ্তি মোজাফ্ফর আহমদের হাত ধরেই। আবার তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) মতো প্রতিষ্ঠান আধুনিক ম্যানেজমেন্ট দুনিয়ার কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। এভাবে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রতিষ্ঠানবহির্ভূত সামাজিক ও নাগরিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে একই সঙ্গে নেতৃত্ব ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। একই ব্যক্তির মধ্যে এতগুলো গুণের সমাহার বিরল। অকপটে সত্যকে বরণ করে নেওয়ার গুণ তার মতো আর ক'জন মানুষের আছে? খ্যাতির শিখরে অবস্থান করেও নিরহঙ্কারী জীবনযাপনে তার জুড়ি মেলা ভার। এ কারণেই ব্যক্তি হিসেবেও তার গ্রহণযোগ্যতা আকাশছোঁয়া। সম্ভবত দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পেরেছিলেন বলেই তিনি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার সংগ্রামে নিরবচ্ছিন্নভাবে নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন। তার মৃত্যুতে এ ক্ষেত্রেও অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের মৃত্যুর কারণে সামাজিক বা নাগরিক আন্দোলনের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নিতে হবে। আজ হয়তো তিনি সশরীরে আমাদের মাঝে নেই। তবে তার আদর্শ সমাজ, রাষ্ট্রের অন্ধকার দূর করার আলোকবর্তিকা হয়ে রইবে সবসময়। মহাপ্রয়াণে এই মহৎপ্রাণকে সশ্রদ্ধ সালাম। তার শোকাহত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমাদের সমবেদনা।
 

No comments

Powered by Blogger.