রক্তদানে জীবন বাঁচে by ফখরুল ইসলাম চৌধুরী পরাগ

১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ১৯৯৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক রক্তদান দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। বাংলাদেশ সরকার নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনের লক্ষ্যে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন ২০০২-এর ধারা ৩৪-এর ক্ষমতাবলে জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কাউন্সিলরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিধিমালা প্রণয়ন করে।


এই বিধিমালা নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিধিমালা ২০০৮ নামে অভিহিত হয়। ২০০৮ সাল থেকে ২০১০-এর ১ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ৩০টি বেসরকারি নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এছাড়া দেশের বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতালসহ সরকারিভাবে সারাদেশে ১১৬টি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বেশ কয়েকটি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র রয়েছে। আমাদের দেশে অনেক লোক মারা যাচ্ছে প্রয়োজনীয় রক্তের অভাবে। অথচ আমাদের একটু চেষ্টা থাকলে হয়তো বেঁচে যেত এসব মানুষ। দেশের বিশাল এক জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের ভ্রান্ত ধারণা থেকে রক্তদানে আগ্রহী নয়। অথচ একটু সচেতন হলে রক্তের অভাবে কোনো লোক মারা যাবে না। আমি দেখেছি রক্তের অভাবে কত লোক মারা যাচ্ছে অথচ নিজের কাছের লোকটিও রক্ত দিতে আগ্রহী নয়। নিজেদের মধ্যে একই গ্রুপের রক্ত থাকার পরও বাইরের লোক বা ডোনার খুঁজতে হয় রক্তের প্রয়োজনে। রক্ত দিতে খুব একটা সাহসের প্রয়োজন হয় না। আবার রক্তদান করা কোনো বীরপুরুষের কাজও নয়। তবে এটি একটি অত্যন্ত মহৎ কাজ। আমাদের এক ব্যাগ রক্ত হাসি ফোটাতে পারে একজন মায়ের, একজন বাবার, একজন স্ত্রীর, একজন সন্তানের মুখে। হয়তো আমাদের রক্তে বেঁচে যেতে পারে একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি। তাই আসুন, একটু সচেতন হই, স্বেচ্ছায় রক্তদান করি, ধরে রাখি একটি পরিবারের হাসি-আনন্দ। স্বেচ্ছায় রক্তদান আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ নোবেল বিজয়ী মাদার তেরেসার কথা_ 'এক ব্যাগ রক্ত শুধু এক ব্যাগ রক্ত নয়, একটি জীবন'।
রক্তদান করতে হলে রক্তদাতার কিছু যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। রক্তদান করতে হলে রক্তদাতার বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ৫৪ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং ওজন হতে হবে কমপক্ষে ৪৮ কেজি। ব্যক্তিটিকে সুস্থ হতে হবে। রক্তদাতার যদি কয়েক মাসের মধ্যে কোনো বড় ধরনের অপারেশন না হয়, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া জাতীয় কোনো অসুখ না হয় এবং রক্ত সংক্রান্ত কোনো অসুখে না ভোগেন, তাহলেই তিনি রক্তদান করতে পারবেন। রক্তদানের সময় রক্তদাতার প্রেসার অবশ্যই স্বাভাবিক থাকতে হবে। এসব ঠিক থাকলেই কেবল কোনো ব্যক্তি রক্তদান করতে পারেন। কোনো ব্যক্তি রক্তদান করলে একজন মানুষের জীবন বাঁচে। তাছাড়া রক্তদাতার অনেক উপকার হয়। নিয়মিত রক্তদান করলে প্রেসার পয়েন্ট স্বাভাবিক থাকে। ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা জটিল বা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে অনেক কম। সুতরাং প্রত্যেক মানুষের উচিত নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদান করা। প্রতি তিন মাস পরপর শরীরের রক্ত কণিকাগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং আবার নতুন রক্ত কণিকা সৃষ্টি হয়। তাই প্রতি চার মাস অন্তর এক ব্যাগ রক্ত সহজেই দান করা যায়। রক্তের সীমাহীন চাহিদা পূরণের জন্য নিজে নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদান করা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি গ্রহণ একটি কার্যকর উদ্যোগ হতে পারে। তাছাড়া নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এ বিষয়ে প্রচারপত্র প্রকাশ করা, উদ্বুদ্ধকরণ স্টিকার প্রকাশ, পাবলিক প্লেসে লিফলেট বিতরণ, বিভিন্ন সময় সেমিনার করার মতো সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, করপোরেট অফিসে রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা যেতে পারে।
poragrcy@yahoo.com
 

No comments

Powered by Blogger.