উড়ালপথে বাংলাদেশ by খসরু চৌধুরী

পাখিবিদেরা সমগ্র পৃথিবীকে ছয়টি প্রাণভৌগোলিক এলাকায় ভাগ করেছেন। বাংলাদেশসহ মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রচ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলেশিয়ার কিছু অংশ পড়েছে প্রাচ্য এলাকা বা ওরিয়েন্টাল রিজিয়নে। এই প্রাচ্য এলাকায় দুটি উপবিভাগ—সিনোহিমালয়ান ও ইন্দোমালিয়ান এলাকার মাঝামাঝি পড়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের যমুনা নদী এবং ভারতের ব্রহ্মপুত্র নদ এই দুটি এলাকার সীমান্ত। এই সীমান্তকে আমরা বরেণ্য প্রাণিবিজ্ঞানী রেজা খানের নাম অনুসারে রেজা খান লাইন বলতে পারি। কারণ গত শতকের আশির দশকে রেজা খানই আবিষ্কার করেছিলেন যে যমুনার পূর্ব পারের প্রাণসম্পদের সঙ্গে পশ্চিম পারের প্রাণসম্পদের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে।
পশ্চিমে রাজমহল পাহাড়মাল, উত্তরে উত্তুঙ্গু হিমালয়, পূর্বে হিমালয়ান পার্বত্যভাঁজ—এরই মাঝে বড় গামলা আকারের ভূখণ্ড বাংলাদেশ। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদী পথগুলো মিলেমিশে পড়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উপসাগর বঙ্গোপসাগরে। সাগর মোহনায় গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল পলির চরাঞ্চল। দেশে গ্রামীণ বনসহ রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, মিশ্র বৃষ্টিপাতের বন, শুকনো শালের জঙ্গল। এই সবকিছুই পাখিদের স্বর্গোদ্যান হয়ে উঠেছে। পাখিদের একদল দূর দেশ থেকে আসে, আরেক দল যাদের বলা হয় লোকাল মাইগ্র্যান্ট—তারা আসে ভারত, মিয়ানমার থেকে। এ ছাড়া দেশের উত্তরের, দক্ষিণের পাখি, পাহাড়ি পাখি, সমতলের পাখি ঋতুচক্রে এলাকা বদলায়। দূর পরিযায়ী পাখিরা সাধারণত তীরখুটা আর হাঁসজাতীয় পাখি। এরা পছন্দ করে যমুনা, পদ্মার চর, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, ফেনী নদীর মোহনার চরাঞ্চল, মেঘনা মোহনার সন্দ্বীপ, উড়িরচর, হাতিয়া, নিঝুমদ্বীপ, ঢালচর, মৌলবীর চর, চর কুকরিমুকরিসহ অজস্র চরাভূমি। ফলে অনেক পাখি বিশ্বের অন্যত্র দুর্লভ হলেও হঠাৎ এদের কাউকে এসব সামুদ্রিক চরায় পেয়ে গেলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কেউ আরও দূর দেশের পথে এসব চরায় যাত্রাবিরতি করে। কেউ সারা শীত মৌসুম এখানেই কাটায়।

No comments

Powered by Blogger.