বন্য প্রাণীর বন্দিত্ব

বন্য প্রাণীর ঠিকানা বনে কিংবা প্রকৃতির কোলে হলেও কিছু লোভাতুর মানুষ অবৈধ ব্যবসা করে পকেট স্ফীত করার অপপ্রক্রিয়ায় লিপ্ত আর তথাকথিত বিলাসীদের উদ্ভট শখের কারণে ওদের জীবন কাটছে বন্দিদশায়। গৃহপালিত পশুর সঙ্গে ওদের যাপিত জীবনযাপনেও রয়েছে ভিন্নতা; কিন্তু স্বীকৃত স্বাধীনতা তারা ভোগ করতে পারছে না।


রাজধানীর কাঁটাবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন মার্কেটে দেদার চলছে বন্য প্রাণী কেনাবেচা। ঢাকার ও দেশের বিভিন্ন স্থানেও এমন কাণ্ডকীর্তির খবর পত্রপত্রিকায় ইতিমধ্যে এসেছে। বন বিভাগ এই অপ্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায় বটে; কিন্তু স্বাধীন মুক্ত জীবনযাপনের অধিকারী এসব বন্য প্রাণীর বন্দিত্ব ঘোচানো যাচ্ছে না। ৫ মার্চ 'কাঁটাবনে দেদার চলছে বন্য প্রাণী বেচাকেনা' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এরই তথ্যচিত্র পুনর্বার তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনেই প্রকাশ, ৩ মার্চ বন বিভাগের লোকজন সেখানে অভিযান চালিয়ে দুর্লভ প্রজাতির বিপুলসংখ্যক পশুপাখি উদ্ধার করেছেন। বিষয়টি ওই পর্যন্তই; তারপর আবার যথারীতি সেখানে এই আইনত দণ্ডনীয় কাজটিই চলছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বক্তব্য, আইনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এ রকম ব্যবসা চালাচ্ছে অসাধু পশুপাখি ব্যবসায়ীরা। এ রকম অভিযান এর আগে বহুবার চালানো হয়েছে বটে; কিন্তু কয়েক দিন পরই আবার যথারীতি শুরু হয় এ রকম অপকর্ম। আইনের দুর্বলতার কারণে যদি এমনটি চলতেই থাকে, তবে আইন সংশোধন করে সবল করার দায়িত্ব কার? বন বিভাগের দায়িত্বশীলদের আরো বক্তব্য, লোকবলের অভাবেও এ ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উলি্লখিত প্রতিটি বিষয়ের দায়দায়িত্ব বর্তায় সরকারের ওপর। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে সজাগ হওয়ার পুনর্বার তাগিদ আমরা দিই। বন্য প্রাণী প্রকৃতি ও পরিবেশের এক অপরিহার্য অঙ্গ। এ ক্ষেত্রে পাখির ভূমিকা অনেক বেশি। ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় খেয়ে এরা ফসল ও জলজ প্রাণীর সুরক্ষা সাধন করে। কিছু পাখি সাহায্য করে উদ্ভিদের পরাগায়ণ ও প্রাণিকুলের প্রজননে। সে ক্ষেত্রে নির্বিচারে পশুপাখি ধরপাকড় ও নিধন করা হলে ক্ষতি আমাদেরই। কিছু কিছু পশুপাখি ধান ও শস্যাদির ক্ষতিও করে বটে; কিন্তু সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। এ ব্যবস্থা ব্যয়বহুল ও অসাধ্য নয়। আমাদের প্রত্যাশা, পশুপাখি ধরে বিক্রি ও হত্যা বন্ধ করায় বন বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, স্থায়ী জনপ্রশাসন ও গণমাধ্যম যার যার অবস্থান থেকে যথাযথ ভূমিকা পালন করবে। শোনা যাচ্ছে, বন্য প্রাণীর ব্যবসা ও পাচার রোধে শিগগির বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে চতুর্দেশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিতে যাচ্ছে। এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বন্য প্রাণীর কেনাবেচা ও নিধন রোধকল্পে প্রশাসনিক উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.