বন বিভাগের কী কাজ-বিষ দিয়ে গাছ হত্যা

মাত্র এক মাস আগে কক্সবাজারের জাহাজপুরা এলাকায় সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে পাকা সড়ক নির্মাণ করতে দেড় শ বছরের পুরোনো গর্জনগাছ কাটার সংবাদ ছাপা হলো। এরই মধ্যে আবার কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মেধাকচ্চপিয়া জাতীয় উদ্যানে চলছে শতবর্ষী গর্জনগাছ নিধন। অবাধে চলতে থাকা এসব বন ধ্বংসের ঘটনায় বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ছে বন বিভাগের ভূমিকা।


গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গাছের গোড়ার বাকল তুলে সেখানে লবণপানি ও তুঁত মিশিয়ে দিলে বিষক্রিয়ায় মাস দেড়েকের মধ্যে গাছটি মারা যায়। পরে মরা গাছের ডালপালা কেটে পাচার করা হয়। পাচারের প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে বেশ লম্বা সময় ধরে। বন বিভাগের কর্মীদের যোগসাজশ ছাড়া এটি সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
কোনো বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো এর দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গাছগাছালিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রেখে সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করা। জাতীয় উদ্যানের মতো সংরক্ষিত এলাকায় এভাবে গাছ নিধন ও পাচার বন সংরক্ষণ প্রচেষ্টার প্রতিই যেন বিদ্রূপ করে।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এক বছর ধরে চলছে এই অপকর্ম। পাচার রোধ করা সম্ভব হলে এভাবে গাছহত্যা চলতে পারত না। এখান থেকে বড় আকারের ও ভারী গাছ বহন করে নিয়ে যাওয়াও বন বিভাগ-সংশ্লিষ্ট বক্তিদের সহায়তা ছাড়া প্রায় অসম্ভব। এর সত্যতা মেলে কাঠচোর হিসেবে লোকমুখে প্রচারিত নামগুলো থেকে, যাদের বেশির ভাগ বন-জায়গিরদার।
দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং আর্থসামাজিক প্রয়োজন ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা অত্যাবশ্যক। এ জন্য বনভূমি ও বনজ সম্পদের সংকোচন ও ক্ষয়রোধ বন্ধ করার কোনো বিকল্প নেই। তাই এভাবে গাছহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে সরকারের তদারকি আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বন রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা বন ধ্বংসের কাজে লিপ্ত থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। এসব ব্যক্তির হাতে আমাদের বন একেবারেই নিরাপদ নয়। এদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.