বস্তিবাসী শিশুরা বড় হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে by মানসুরা হোসাইন

শহুরে বস্তিবাসী শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের অঙ্গীকার ও নীতির অভাব নেই। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। শহর উন্নয়ন পরিকল্পনায় তাদের কথা আলাদাভাবে বলা হয় না।

নগরের দরিদ্র শিশুদের নিয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের মতে, বস্তিবাসী শিশুরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপদ আবাসনসহ বিভিন্ন মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উচ্ছেদের ঝুঁকির মধ্যে থাকায় তাদের জীবনে উন্নয়ন স্থায়ী হতে পারে না।
জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০১২ ‘নগর জীবনে শিশুরা’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বস্তি এলাকায় অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার শহরের সার্বিক হারের চেয়ে ৭৯ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও ইউনিসেফের সর্বশেষ ‘বাংলাদেশ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০০৯’ অনুযায়ী বস্তি এলাকার মাত্র ৬৫ শতাংশ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। অন্যান্য এলাকায় এ হার ৮৪ শতাংশ।
দুটি পরিবারের কথা: কারওয়ান বাজার রেললাইনের পাশে বস্তিতে থাকা নৌফুল বেগম জামালপুর থেকে আট বছর আগে ঢাকায় আসেন। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে ১১ বছর বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। অন্য দুই সন্তানের কেউই স্কুলে যায় না। দিনে খাবারের পেছনেই খরচ হয় ২০০ টাকা। অথচ স্বামীর আয় দিনে মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
নৌফুল বলেন, ‘পুলাপানরে স্কুলে ভর্তি করতে চাইলে বেতন চায় ৫০০-৮০০ টাকা। সরকারি হাসপাতালে গেলেও বাইরে থেইক্যা ওষুধ কিনতে বলে।’
মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ি বস্তির শামীমার মেয়ের বয়স সাড়ে চার বছর। মেয়েকে ভালোমন্দ খাওয়াতে গেলে প্রয়োজনীয় কিছু একটা কাটছাঁট করতে হয় তাঁকে। নর্দমার ওপরে শামীমার বাঁশ ও কাঠের ছোট ঘরটি। ঘরের একটু দূরেই কাঁচা পায়খানা। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হচ্ছে শামীমার মেয়ে।
উচ্ছেদের প্রভাব: বস্তি উচ্ছেদের ফলে মানসিক আঘাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয় শিশুরা। বস্তিবাসীদের নিয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের মতে, উচ্ছেদের ফলে বস্তির শিশুরা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া থেকে ছিটকে পড়ে।
ইউনিসেফের প্রোগ্রাম অফিসার মো. মনিরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসার সঙ্গে চুক্তি করে বসানো পানির লাইনসহ তাদের রূপনগর বস্তি প্রকল্পের স্থাপনা একাধিকবার উচ্ছেদের সময় ভেঙে দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞদের কথা: বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম ও বস্তিবাসীদের অধিকার নিয়ে কর্মরত জোট কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওরের নির্বাহী পরিষদের সহসভাপতি এহছানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদসহ বিভিন্ন নীতি ও সনদে নগরের দরিদ্র শিশুদের উন্নয়নে অঙ্গীকার করেছে। তবে তার বাস্তবায়ন ততটা নেই। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেটে স্পষ্টভাবে না এলে বস্তিবাসী শিশুর উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে না।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, নগর নিয়ে পরিকল্পনায় বস্তিবাসী শিশুদের কথা সেভাবে কখনোই আসে না। বড়জোর খেলার মাঠ ও পার্কের কথা উল্লেখ থাকে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহিদ খান প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে বস্তিবাসী শিশুদের নিয়ে আলাদা কোনো প্রকল্প নেই। নারায়ণগঞ্জসহ কয়েকটি শহরে নগর দরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.