কুসুন্দা ভাষার শেষ উত্তরাধিকারী

নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকার এক নারী জ্ঞানী মায়া সেন। বয়স ৭৫ বছর। জীবিকার জন্য এই বয়সেও নিয়মিত পাথর ভাঙার মতো কষ্টসাধ্য কাজ করতে হয় তাঁকে। মায়া সেনের এই সংগ্রামের কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে আছে গোটা পৃথিবী! তিনি পৃথিবীর একটি ঐতিহ্যের শেষ উত্তরাধিকারী!

মানবসভ্যতার বিরলতম এক ইতিহাস তাঁর ধমনিতে বহমান। সাবলীলভাবে ‘কুসুন্দা’ ভাষা বলতে পারেন, পৃথিবীতে একমাত্র ব্যক্তি তিনিই। এমনকি আদিবাসী কুসুন্দা সম্প্রদায়ের লোকজনও এই ভাষায় কথা বলতে পারে না।
মায়া সেনের আশঙ্কা, তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে এই ভাষা। তিনি বলেন, কুসুন্দা সম্প্রদায়ের লোকেরাও এই ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারে না। কয়েক বছর আগেও নেপালের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলের একটি গ্রামের একজন নারী ও একজন পুরুষ কুসুন্দা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন। তাঁরা হলেন পুনাই ঠাকুরি ও তাঁর মেয়ে কমলা ক্ষত্রি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর মেয়ে কমলা দেশত্যাগ করেন।
নেপালের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবমতে, দেশটিতে কুসুন্দা সম্প্রদায়ের প্রায় ১০০ লোক রয়েছে। গবেষকেরা এখন পর্যন্ত কুসুন্দা ভাষায় তিনটি স্বরবর্ণ ও ১৫টি ব্যঞ্জনবর্ণ শনাক্ত করতে পেরেছেন।
নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের মাধব প্রসাদ পোখারেল কুসুন্দা আদিবাসীদের নিয়ে এক দশক ধরে গবেষণা করেন। তিনি বলেন, কুসুন্দা একেবারেই ব্যতিক্রমী ও বিচ্ছিন্ন ভাষা। এর সঙ্গে বিশ্বের অন্য কোনো সাধারণ ভাষার সম্পর্ক নেই।
তবে এই ভাষাকে টিকিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা হিসেবে ভাষাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হচ্ছেন মায়া সেনের কাছে। তাঁরা মায়া সেনের কাছ থেকে পাঠ নিচ্ছেন, শেখার চেষ্টা করছেন। নিজেদের উদ্যোগেই তা সংরক্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.