আজ এই দিনে by আসিফ আহমেদ

ইতিহাসের এই দিনে_ এমন শিরোনাম থাকে সংবাদপত্রে। এতে শত শত বছর আগে কী ঘটেছিল, সেটা জানা যায়। ভিন দেশের ঘটনাও এভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ঘটনাও অন্য দেশের আগ্রহীরা জানতে পারে। আমাদের দেশ নিয়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে আগ্রহ কতটা, সেটা নিয়ে তেমন কাজ হয় বলে মনে হয় না।
আমরা অর্থনীতিতে পিছিয়ে। খেলাধুলাতেও তেমন সাড়া জাগানো কোনো সাফল্য নেই। ফুটবলে আমাদের স্থান তলানিতে। ক্রিকেটে কিছু অগ্রগতি রয়েছে বটে, তবে এ খেলা কেবল ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল এমন কয়েকটি দেশেই হয়। হকি-বাস্কেটবলে আমরা খেলি 'হারিজিতি নাহি লাজ' মনোভাব নিয়ে। তবে জেতার খাতায় তেমন কিছু যোগ হয় না আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
প্রকৃতির রোষের শিকার মাঝে মধ্যেই হয় বাংলাদেশ। অনেক দেশ ঘন ঘন ঝড়-বন্যার কারণে এ দেশকে চিনে থাকে। সিডর-আইলাকে তারা মনে রাখে। রাজনীতিতে অস্থিরতার জন্যও এ দেশের পরিচিতি রয়েছে। হরতাল-ধর্মঘট আহ্বান করা হয়ে থাকে ঘন ঘন। জঙ্গিবাদের বড় কিছু ঘটনা ঘটেছে এ দেশে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট একদিনে দেশের প্রায় পাঁচশ' স্থানে বোমাবাজি করেছিল জেএমবি নামের একটি সংগঠন। এ দলের নেতারা ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের আরও ধ্বংসাত্মক ধরনের হামলা পরিচালনার ক্ষমতা রয়েছে। তবে জনগণ এবং সরকার সচেতন হওয়ায় তারা আপাতত সফল হয়নি। ভবিষ্যতে হবে কি?
আজ রোববার সারাদেশে হরতাল। বাংলাদেশের অনেক হরতাল হয়েছে। 'আজকের এই দিনে' উল্লেখ করতে গিয়ে এ হরতালের কথা কেউ বিশেষভাবে উল্লেখ করবে বলে মনে হয় না। হরতাল গতানুগতিক। এতে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, আবার হয়ও না। অফিসে যেতে হয় প্রায় সবাইকে। কিন্তু কাজ করায় কারও আগ্রহ থাকে না। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় হরতালে বন্ধ থাকে। কোনো পিতামাতাই সন্তানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চান না। ছাত্রছাত্রীরা সব দেশেই ছুটি পছন্দ করে। রেইনি ডে ঘোষণা হলে তার চেয়ে আনন্দের আর কী আছে। বড় ধরনের শোকের ঘটনাতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি মেলে। তাতেও শিক্ষার্থীদের খুশির ভাব গোপন থাকে না। হরতাল এমন ধরনেরই একটি অনির্ধারিত ছুটির দিন। শিক্ষকরাও হরতালে খুশি হন। এদিনে সংসারের কাজে মনোযোগ দিতে পারেন। রাজপথে আজ যানবাহন কম থাকবে। প্রাইভেটকার তেমন কেউ বের করবে না। বনানী-গুলশান এলাকায় কিছু গাড়ি বের হয়। তবে সবারই ভয় থাকে, যদি কিছু হয়ে যায়। রিকশাচালকরা প্রতিদিন কাজ করেন। অনেক চালক বলেন, এ ধরনের বিরতি পেলে তারা সংসারের খুঁটিনাটি কাজ করেন। ছোট দোকান খোলা থাকে, বড় দোকান ও মার্কেট বন্ধ থাকে। এভাবে দোকান কর্মচারীদেরও ছুটি মেলে। তবে হরতালে কৃষকদের ছুটি নেই। তারা জমিতে যান, রোদ থাকলে রোদে পোড়েন, বৃষ্টি থাকলে ভেজেন। আজ আমাদের ছুটি_ এমন গান গেয়ে আনন্দ করার অবকাশ তাদের নেই। হরতাল আহ্বানকারীরা এদিকে মনোযোগ দিতে পারে। বিএনপি তাদের কর্মীদের মাঠে মাঠে পাঠিয়ে দিতে পারে পিকেটিংয়ের জন্য। তারা গিয়ে কৃষক ও দিনমজুরদের বলবে, আজ কোনো কাজ নেই। সবাইকে ঘরে বসে থাকতে হবে। কর্মনাশা দিনে কাজ করা গুরুতর অপরাধ। কেউ তা লঙ্ঘন করলে রক্ষে নেই। এমনটি করা হলে ইতিহাসের এই দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসেবে অবশ্যই তা চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
কিন্তু এমন শক্ত কাজ করায় উৎসাহী খুব বেশি লোক পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। এখন তো হরতাল যারা ডাকে তারাও ঘরে বসে থাকে ছুটির আমেজে। মিছিল-সমাবেশে কোথাও কোথাও কিছু কর্মী নামে বটে, কিন্তু পিকেটিং তো অতীতের বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.