সরকারের উচিত সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা-ধানচাষির হতাশা

ধানের ফলন ভালো হলে দাম কমে যায়; ফলে চালের বাজারও চড়া হয় না। এটা আনন্দের বিষয়। কিন্তু ধানের বাম্পার ফলনে ধানচাষির সমূহ ক্ষতি, যদি ধানের দাম এত কম হয় যে চাষের খরচটাই ওঠে না। ধানের বাম্পার ফলনের পর এবার এমন দুর্দশায় পড়েছেন দেশের ধানচাষিরা।


যে ধান বাজারে উঠেছে, তা প্রতি মণ ফলাতে কৃষকের খরচ হয়েছে গড়ে ৬৫০ টাকা। আর বাজারে এর দাম উঠেছে ৫১০ থেকে সর্বোচ্চ ৬২০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কৃষকের সর্বনিম্ন ক্ষতি প্রতি মণে ৩০ টাকা। যে কৃষক যত বেশি ধান ফলিয়েছেন, তিনি আজ তত বেশি ক্ষতির শিকার।
এই দুর্দশা থেকে ধানচাষিদের পরিত্রাণের কী উপায়? সরকারের এগিয়ে আসা, কৃষকের ক্ষতি না হয়, বরং যৎসামান্য লাভ থাকে এমন দাম ধার্য করে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে নেওয়া। কিন্তু সরকার শুধু ধানের সংগ্রহমূল্য ঘোষণা করে, কৃষকদের কাছ থেকে ওই দামে সরাসরি ধান কেনে না।
কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনেন চালকলের মালিক আর ধান ব্যবসায়ীরা। তাঁরা চেষ্টা করেন সর্বনিম্ন দরে ধান কিনে সরকারের নির্ধারিত মূল্যে তা সরকারের কাছে বিক্রি করতে। এবার সরকার ধানের সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি মণ ৭২০ টাকা। কিন্তু এই ঘোষণার সুফল ধানচাষিরা পাচ্ছেন না। কারণ, এর ফলে বাজারে ধানের দাম এত সামান্য বেড়েছে যে তাতে কৃষকদের ক্ষতি পোষাবে না।
প্রত্যাশা থাকে, সরকার ধানের দাম ঘোষণা করলে সেই অনুযায়ী বাজারেও ধানের দাম বাড়ে। কিন্তু এবার প্রত্যাশিত মাত্রায় বাড়েনি। ফলে হাওর অঞ্চলের ধানচাষিরা লোকসানে ধান বিক্রি করতে চাইছেন না, তাঁরা ধান বাজারে আনা কমিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে চালকলের মালিক ও ধান ব্যবসায়ীরা এখনো ধান কেনায় তৎপর হননি। চালকলের মালিকেরা বলছেন, আগের মৌসুমের প্রচুর চাল তাঁদের গুদামে অবিক্রীত রয়ে গেছে।
চালকলের মালিকেরা সর্বোচ্চ মুনাফা করার চেষ্টা করবেন, এটা বোধগম্য। সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে তাঁরা কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনার চেষ্টা করেন। ধানের বাজার কার্যত তাঁদের নিয়ন্ত্রণেই থাকে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ধানচাষিদের দুর্দশা কোনো দিনই দূর হওয়ার কথা নয়।
সরকারের পক্ষ থেকে ধানের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার কী অর্থ হয়, যদি সেই দাম ধানচাষিরা না পেয়ে পান চালকলের মালিকেরা? সরকার যদি আন্তরিকভাবে চায়, ধানচাষিরা লোকসানের শিকার না হোক, তাহলে উচিত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার উদ্যোগ নেওয়া। নইলে ধানের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার কোনো সুফল অন্তত ধানচাষিদের ঘরে পৌঁছবে না।n:
চট্টগ্রামে সংঘর্ষ, আগুন

No comments

Powered by Blogger.