ইংরেজি পড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে কিছু কথা by মু. মাছুম বিল্লাহ

ইংরেজি ও বাংলা ভাষার গঠনপ্রণালী আলাদা। বাংলা দিয়ে ইংরেজি শেখাতে গেলে তা আর সঠিক ইংরেজি শেখা হবে না, সেটা অনেকাংশেই বাংরেজি হবে। আমরা মূলত তা-ই করছি। যেমন- আমাদের দেশে প্রচলিত গ্রামার বইগুলোতে লেখা আছে, কান্টিনিউআস টেন্স বুঝতে হলে দেখতে হবে শেষে 'তেছি' আছে কি না।


এভাবে ইংরেজি শিখলে আসল ইংরেজি শেখা হয় না, ফলে ভুলটাই জানা হয়ে যায়।
ভাষা ব্যবহারের চেয়ে নিয়মকানুন জানা, নিয়মকানুনের গভীরে প্রবেশ করা, গ্রামারের চুলচেরা বিশ্লেষণ, বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ এবং ব্যতিক্রমী নিয়মকানুন জানা বা ছাত্রছাত্রীদের জানানো নিয়েই শিক্ষকরা বেশি ব্যস্ত থাকেন। বাস্তবে ভাষা ব্যবহারের দিকে তাঁদের দৃষ্টি কম কিংবা বিষয়টি একেবারেই গুরুত্ব পায় না। ফলে বাধ্যতামূলকভাবে ইংরেজি পড়ে পাবলিক পরীক্ষায় পাস করার পরও আমাদের শিক্ষার্থীরা বাস্তব জীবনে ইংরেজি ব্যবহার করতে পারে না। আমাদের দেশে ইংরেজি শেখার পদ্ধতি এসব নিয়মকানুনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কে কত বড় শিক্ষক এবং কে কতটা জানেন- সবই বিচার করা হয় এ ব্যাপারগুলো দিয়ে।
ধরা যাক, একজন শিক্ষার্থী জানল যে sleeping যখনই subjec-এর মতো বাক্যের প্রথমে বসে অর্থাৎ noun-এর মতো কাজ করে, তখন তার নাম Gerund. আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন, তাঁরা এ ব্যাপারটি জানেন এবং শিক্ষাজীবনে তাঁরা ব্যাপারটির সঙ্গে বহুবার পরিচিত হয়েছেন; কিন্তু বাস্তব জীবনে ইংরেজি ব্যবহার করতে গিয়ে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন। বাস্তব জীবনে ইংরেজি ভাষা কিভাবে কত সহজ উপায়ে আমরা ব্যবহার করতে পারি, তা নিয়ে খুব কম কথাবার্তাই হচ্ছে। বরং নিয়মকানুন যত জটিল উপায়ে উপস্থাপন করা যায়, ততই সাফল্য মনে করেন আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক। এটি ইংরেজি শেখানোর ক্ষেত্রে একটি প্রধান সমস্যা।
ইংরেজির গ্রামারের বিভিন্ন নাম, বিভাগ, কোথায়, কখন ও কেন বসে ইত্যাদি সব ছাত্রছাত্রীই সারা জীবন পড়ে; কিন্তু তাতে কাজ কতটা হয়েছে বা হচ্ছে, তার প্রমাণ আমাদের সামনে বর্তমান। বাস্তব জীবনে ইংরেজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে চরম দৈন্য প্রকাশ করে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা। গ্র্যাজুয়েটরা বাস্তব জীবনে ইংরেজি ব্যবহার করার জন্য আবার ভর্তি হন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে, যাতে স্পোকেন ও রিটেন ইংরেজি শিখতে পারেন। ইংরেজি আমরা শিখি এবং শেখাই, কিন্তু এই ব্যাপারটি কখনোই গুরুত্ব পায়নি বিধায় ছাত্রছাত্রীরা স্পোকেন ইংরেজিতে চরম দৈন্য প্রকাশ করে।
আসলে শিক্ষার্থীদের জানা দরকার ছিল verb-এর সঙ্গে ing যোগ করে কিভাবে নিজেরা বাক্য তৈরি করবে এবং এগুলো ব্যবহার করে আরো বহু বাক্য তৈরি করবে। শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ হলো এ ব্যাপারটি নিশ্চিত করা। কিন্তু কোনো পক্ষই এ ব্যাপারটিতে উৎসাহ প্রদান না করে শুধু জটিল নিয়মকানুন এবং এগুলোর ব্যাখ্যা করে বইপুস্তক ভর্তি করে ফেলেছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভাষা ব্যবহারের কৌশল ও দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। ভাষা ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করে দিচ্ছে জটিল গ্রামার জানার ও শেখার এই পদ্ধতি।
শিক্ষার্থীদের প্রচুর অনুশীলন করতে হবে প্রতিটি গ্রামার পয়েন্টের ওপর, যাতে তারা গ্রামারের ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারে নিয়মকানুন মুখস্থ করার ওপর কম গুরুত্ব দিয়ে। পরবর্তীকালে যখন ভাষার ওপর উচ্চশিক্ষা নেবে কিংবা ভাষা নিয়ে গবেষণা করবে, তখন এসব বিষয় বিস্তারিত জানবে এবং গ্রামারের গভীরে প্রবেশ করবে। গ্রামারের প্রতিটি বিষয় context থেকে শিখতে হবে; তাহলে সেটা হবে বাস্তবমুখী শিক্ষা। আমাদের ইংরেজি শিক্ষকরা এবং বাজারে প্রচলিত বইপুস্তক ব্যাপারটিকে মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না। ফলে সঠিকভাবে ইংরেজি শেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ইংরেজি শেখানোর জন্য দরকার সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত শিক্ষক, যাঁদের সংকট আমাদের দেশে প্রকট।
আসলে ছাত্রছাত্রীদের আমরা কেন গ্রামার শেখাই আর আমরাই বা কেন শিখি, প্রশিক্ষণে আমি শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করি। সবাই জবাব দেন, ছাত্রছাত্রীরা যাতে শুদ্ধভাবে ইংরেজি লিখতে ও বলতে পারে। উত্তরে আমি বলি, আমরা তো গ্রামার পড়ানো শুরু করি সেই ছোট বয়স থেকেই। ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে তো বটেই, তার পরও কজন ছাত্রছাত্রী শুদ্ধভাবে ইংরেজি লিখতে বা বলতে পারে? আমাদের শিক্ষকসমাজের মধ্যেই বা আমরা কজন পারি? কিন্তু তাঁরা সবাই গ্রামারের বিভিন্ন ধরনের নিয়মকানুনের সঙ্গে পরিচিত এবং জটিল দিকগুলোও জানেন। কিন্তু স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভাষা ব্যবহার করতে জানেন না। তাহলে আমাদের শুধু নিয়ম জানা এবং জানানোর ওপর এত গুরুত্ব দিয়ে কী লাভ হচ্ছে?
শুধু ব্যাকরণ শেখানো নিয়ে ব্যস্ত থাকা কতটা অবাস্তব, আমরা কি কখনো তা ভেবে দেখেছি? যেমন Rice is eaten by me. এ ধরনের ইংরেজি কি আমরা কখনো ব্যবহার করি? অথচ Active-Passive নিয়ে ইংরেজি শিক্ষকদের মধ্যে কে কতটা জানেন, তা দেখানোর প্রতিযোগিতা দেখা যায়। অস্বাভাবিক কিছু নিয়মকানুন সংযোজন করা হয় এবং জাতীয় পরীক্ষায়ও এসব প্রশ্ন দিয়ে মেধা যাচাই করা হয়। আসলে এসব পরীক্ষা দিয়ে কখনো ইংরেজির দক্ষতা যাচাই করা যায় না।
Narration (উক্তি) পড়ানোর ক্ষেত্রেও একই কথা। যে উদ্দ্যেশ্যে উক্তি পড়ানো হয় শিক্ষার্থীরা তা বাস্তবায়ন করতে পারে না বাস্তব জীবনে। উক্তির ক্ষেত্রে ঠবৎন-এর খেলা প্রথম ক্রিয়া; অতীতকালের হলে পরের ক্রিয়াও অতীত হবে, শুধু যেসব ব্যাপার পরিবর্তন করা যায় না কিংবা সবাই যে ব্যাপারটি জানে, শুধু সেসব ক্ষেত্রে ক্রিয়ার কালের পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আমরা কী করি, গাদা গাদা নিয়ম যেমন Reporting Verb, Reported Speech, Inverted Comma ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করি আর ছাত্রছাত্রীরা বাস্তব জীবনে সঠিকভাবে উক্তির ব্যবহার জানে না, তারা সব সময়ই ভুল করতে থাকে।
এত কিছুর পরও দেখা যায়, দিন দিন শিক্ষাপদ্ধতি উন্নত হচ্ছে, ইংরেজি শেখার বা শেখানোর ধরন পাল্টে যাচ্ছে দুনিয়াব্যাপী, অথচ আমরা বসে আছি সেই মান্ধাতার আমলে। এখনো ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই গুরু মারা ইংরেজি গ্রামার দিয়ে শিক্ষকদের ইংরেজি জ্ঞান পরীক্ষা করা হয়। ইংরেজি চারটি skill-এর পরীক্ষা নেওয়া হয় না এবং এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ করা শিক্ষকরাও ইংরেজি সেভাবে পড়ান। শিক্ষকদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা চলে কে কত কঠিন গ্রামার পড়াতে পারেন। অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরাও শিক্ষক যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি দেখে থাকে।
আর এই গ্রামারের জ্ঞান জাহির করার জন্য থাকে তাঁদের আপ্রাণ চেষ্টা। এই অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ পেতে হবে। আর পরিত্রাণের প্রথম পন্থাই হলো উন্নত মানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে শিক্ষকদের ইংরেজি পড়ানোর ধরন পাল্টাতে হবে, তাহলেই আমরা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের বর্তমান বিশ্বের চাহিদামাফিক মানবসম্পদে রূপান্তর করতে পারব।
লেখক : ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি পেইসের ইংরেজি বিভাগে
বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত
mmbillah2000@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.