চট্টগ্রামে তাণ্ডব-ছয় মামলায় এমপি শামসুলসহ আসামি ২১০০ নেতা-কর্মী

চট্টগ্রামে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে জামায়াতের সংসদ সদস্য শামসুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহদাত হোসেন, উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরীসহ দুই হাজার ১০০ জন নেতা-কর্মীকে।


গত রবিবার রাতে নগরের কোতোয়ালি ও খুলশী থানায় মামলাগুলো করা হয়। এর মধ্যে তিনটি দ্রুত বিচার আইনে করা হয়েছে। অন্য তিনটি করা হয়েছে হামলা, ভাঙচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে। খুলশী থানায় দায়ের করা দুটি মামলার মধ্যে একটির বাদী হলেন একটি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা।
ঘটনার দিন রবিবার আটক করা ৪৭ জনের মধ্যে ২৮ জনকে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় ২৩ জন। খুলশী থানায় পাঁচজন। গতকাল সোমবার বিকেলে তাদের মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত সবাইকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, গত রবিবার বিকেলে নাসিমন ভবন এবং কাজির দেউরী এলাকায় গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ভয়ভীতির মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে এ থানায় চারটি মামলা করা হয়।
এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইনের দুটি মামলার বাদী হয়েছেন উপপরিদর্শক হারুন অর রশিদ ও সহকারী উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এ দুই মামলায় যথাক্রমে ১৩ জন ও ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েক শ জনকে আসামি করা হয়।
এ ছাড়া সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা দুটি মামলায় যথাক্রমে ১৮৯ জন ও ১৬২ জনের নাম উল্লেখসহ আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত আরো কয়েক শ জনকে। তাদের মধ্যে একটি মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহদাত হোসেনকে।
খুলশী থানার ওসি মো. মফিজ উদ্দীন বলেন, 'নগরের ইস্পাহানি মোড়ে ২০০-৩০০ উচ্ছৃঙ্খল জনতা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করে জনগণের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগে উপপরিদর্শক ওয়ালি উদ্দিন আকবর বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা করেন। এই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিনের মালিকানাধীন 'আমিন শপিং সেন্টারের' কাচ ভাঙচুর করায় ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সত্ব তলাপাত্র বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২০০-৩০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। দুটি মামলা তদন্ত করছেন যথাক্রমে উপপরিদর্শক সাইফুদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম।
দুটি থানায় করা এ ছয়টি মামলায় বিএনপি ও যুবদলের আরো কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন নগর বিএনপির সহসভাপতি আবু সুফিয়ান, নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী। তবে চট্টগ্রামের প্রভাবশালী নেতাদের আসামি করা হয়নি।
কোতোয়ালি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ আল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুলিশ ভিডিও ফুটেজ ও স্থির চিত্র যাচাই-বাছাই, ধৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো যাচাই-বাছাই ও তদন্তে যাঁরা আসবেন, তাঁরাও এই মামলার আসামি হবেন।'
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ আবদুল্লাহীল বাকী বলেন, 'সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করেই মামলা হয়েছে।'
দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলার বাদী কোতোয়ালি থানার সহকারী উপপরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'ঘটনার সময় আটক হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে যাঁদের নাম পাওয়া গেছে, তাঁদের আসামি করে মামলা করেছি।'
উল্লেখ্য, রবিবার বিকেলে শহরের কাজির দেউরী, নাসিমন ভবন ও এনায়েত বাজার এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক লোক আহত হয়। এ সময় তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.