গণমিছিল হয়নি, নয়াপল্টনে বিএনপি জোটের সমাবেশ-তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য হবে

সরকারের পতন ঘটানোর এক দফা আন্দোলনের হুমকির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশ। পুলিশ পূর্বঘোষিত গণমিছিল করতে না দেওয়ায় গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ১৮ দলীয় জোটের নেতারা।


সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'জনগণ জানে কিভাবে দাবি আদায় করতে হয়। নেত্রীর (খালেদা জিয়া) নির্দেশে গণমিছিলের পরিবর্তে আমরা সমাবেশ করছি।' প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'দয়া করে গণতান্ত্রিক কর্মসূচির পথ বন্ধ করবেন না। এর পরিণতি শুভ হবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিন। আমাদের নেত্রীর বেঁধে দেওয়া ১০ জুনের মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি মেনে না নিলে সব গণতন্ত্রকামী মানুষকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সরকার হত্যা-গুম-নির্যাতন চালিয়ে ও বিরোধী দলকে কথা বলতে না দিয়ে দেশকে অন্ধকার রাজনীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।'
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় শুরু হয় বিক্ষোভ সমাবেশ। শেষ হয় সন্ধ্যা সোয়া ৬টায়। গণমিছিল হবে এমনটি ভেবেই গতকাল দুপুরের পর থেকে জোটের নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষোভ সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেয়। কিন্তু গণমিছিল হচ্ছে না- এ ঘোষণার পর ধীরে ধীরে লোকসমাগম কমতে থাকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, 'ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য নেতাকে গুম করা হয়েছে। সরকার আজ মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের মুখ বন্ধ রাখতে চায়। গতকাল (রবিবার) সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। আজও আমাদের কর্মসূচি করতে বাধা দিয়েছে। অবিলম্বে ইলিয়াস আলীকে ফেরত দিন। তাঁর পরিবারের কষ্ট বোঝার চেষ্টা করুন। মানুষকে ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। মিথ্যা মামলা দিয়ে অত্যাচার-নির্যাতনের যে পথ অবলম্বন করেছেন, তা থেকে বিরত থাকুন। রিজভীসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি চাই। অবিলম্বে তাঁদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করুন।'
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগ বাধ্য হবে। কারণ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ভারতের প্রভাবশালী অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় বলে গেছেন, তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করেন। এ জন্য আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির তাগিদ দিয়ে গেছেন তাঁরা। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশেরও একই মত।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের দমনের মিশনে মাঠে নেমেছে। এরই ধারাবাহিকতায় চৌধুরী আলম, ইলিয়াস আলীসহ সারা দেশের বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা-গুম চলছে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা মামলা থাকলে আপনারা পরিচয় নিয়ে যাবেন। বিএনপি নেতা-কর্মীরা আদালতে যাবে। কিন্তু ছদ্মবেশে বাসায় আসবেন না। কারণ সবাই ইলিয়াস আলী নয় যে কেউ গিয়ে বললেই সঙ্গে সঙ্গে তার সঙ্গে চলে যাবে। তখন আপনাদেরও সমস্যা হতে পারে।'
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু, আমানউল্লাহ আমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আজাদ এমপি, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির সভাপতি খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
জামায়াত-শিবিরের ১১ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তারের দাবি
ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল ১৮ দলীয় জোটের পূর্বনির্ধারিত গণমিছিল করার সময় রাজধানীতে জামায়াত-শিবিরের ১১ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এক যুক্ত বিবৃতিতে জামায়াতের ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য পুলিশ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে।

No comments

Powered by Blogger.