নদীতে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ এলাকাবাসীর সর্বনাশ by সুমন্ত চক্রবর্তী


খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় শিবসার শাখা গাংরখী নদীর দুই কিলোমিটার দখল করে পাটা (বাঁশের বেড়া) দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে এলাকার কৃষকেরা নদীর পানি সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে কয়েক হাজার বিঘা জমি কয়েক বছর ধরে অনাবাদি পড়ে থাকছে। প্রবহমান এই নদীকে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে জেলা প্রশাসন ইজারা দিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। গড়ইখালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কর্মী কামরুজ্জামান গাইন সমিতির নামে এই নদী ইজারা নিয়েছেন।


সরেজমিনে দেখা যায়, শিবসা নদীর শাখা গাংরখীর কুমখালী থেকে বৈদ্যকোনা পর্যন্ত দুই প্রান্তে পাটা দিয়ে আটকে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, কুমখালী থেকে বৈদ্যকোনা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার অংশে মাছ চাষের জন্য প্রায় পাঁচ বছর আগে পাটা দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। পাটা দেওয়ায় কৃষকেরা সেচের জন্য এই নদী থেকে পানি নিতে এবং মাছ শিকার করতে পারছেন না। এ ছাড়া ইজারাদার ইচ্ছেমতো অসময়ে নদীতে লবণ পানি তোলায় এলাকার হাজার হাজার একর জমি ছয় বছর ধরে অনাবাদি থাকছে।
দক্ষিণ কুমখালী গ্রামের সুধান্ন মণ্ডল বলেন, ‘আগে গোলাভরা ধান থাকত, এখন আর ধান হয় না। তাই আমার ছেলেরা এখন অন্যত্র কাজ করতে যায়।’
হড্ড গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে আমরা চাষাবাদের জন্য এই নদীর পানি ব্যবহার করতাম। এখন আর পানি নিতে দেওয়া হয় না। যখন-তখন নদীতে লবণ পানি তোলায় জমিতে ফসলও হচ্ছে না।’
এ অভিযোগ প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান গাইন বলেন, ‘আমি এ বছর আবারও দুই বছরের জন্য নদী ইজারা নিয়েছি। পানিপ্রবাহ ঠিক রেখেই পাটা দিয়েছি।’
গড়ইখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, নদীর উত্তর পাশের হাজার হাজার বিঘা জমিতে ধান হচ্ছে না। নদী ইজারা দেওয়ার ফলে এ সমস্যা হচ্ছে। আর যাঁরা ইজারা নিয়েছেন তাঁরা ইচ্ছেমতো লবণ পানি তোলায় জমিতে কোনো ফসল হচ্ছে না। গত তিন বছরে এ এলাকায় কোনো ধান হয়নি।
খুলনা জেলা প্রশাসক জমশের আহাম্মদ খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, নদী ইজারা দেওয়ার সময় কতগুলো শর্ত থাকে। তার অন্যতম হলো নদীতে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নদীতে পাটা দেওয়ারও কোনো নিয়ম নেই।
খুলনা রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নদী ইজারা দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত এর ইজারা বাতিলের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
খুলনা-৬ আসনের সাংসদ সোহরাব আলী বলেন, ‘নদীতে পাটা দিয়ে জনগণের ক্ষতি করা যাবে না। এখন শুকনো সময়, আমি এলাকায় গিয়ে পাটা তুলে দেব।’
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক তরুণ কান্তি শিকদার বলেন, নদীতে পাটা দেওয়া অবৈধ। এটি দণ্ডনীয় অপরাধ।

No comments

Powered by Blogger.