মন্ত্রীর ভাই বাচ্চু গ্রেফতার হচ্ছে না-মোবাকে প্রধান আসামি করে চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে by পিনাকি দাসগুপ্ত

দন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন মোবাকে প্রধান আসামি করে মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলার চার্জশিটের কাজ চলছে। অন্যদিকে মামলার এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুসহ অন্য আসামিরা আপাতত রেহাই পাচ্ছেন। এমনকি তাদের গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে না। এদিকে গতকাল শুক্রবার লোকমানকে গুলি করে হত্যার কথা


স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন নাজমুল হাসান ওরফে কিলার শরীফ। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে
পাঠানো হয়। এ নিয়ে লোকমান হত্যা মামলায় আটজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য সাতজন হলেন_ আশরাফুল সরকার, হাজি সেলিম, ফারুক হোসেন, শাহিন মিয়া, মাহফুজুর রহমান তাওয়াব ওরফে সবুজ, শরীফ ও আওলাদ হোসেন রুবেল। মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, লোকমান হত্যাকাণ্ডে সরাসরি যারা জড়িত ছিল তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করতে মোবারক হোসেন মোবার প্রয়োজন। মোবাই বলতে পারবেন কে কে পরিকল্পনা করেছেন ও অর্থের জোগান দিয়েছেন।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার খন্দকার মুহিদ উদ্দিন সমকালকে বলেন, লোকমান হত্যা মামলার তদন্ত মানসম্পন্নভাবে হচ্ছে। তদন্তে যাদের নাম আসছে তাদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত তো শেষ হয়নি। কবে নাগাদ মামলার চার্জশিট প্রদান করা হতে পারে_ এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার বলেন, তদন্তে নিয়ে যাতে কোনো বিতর্কের সৃষ্টি না হয় সেদিক বিবেচনায় যত তাড়াতাড়ি চার্জশিট দেওয়া যায় সে চেষ্টাই করা হচ্ছে।
পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, লোকমান হত্যার তদন্ত নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। তদন্তের প্রথম টার্গেট ছিল আসল কিলারকে ধরা। তাকে গ্রেফতার ও ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রায় দু'মাসেও কেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ ঠিক নয়। তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।
তদন্ত সূত্র জানায়, মামলায় গ্রেফতারকৃত ১০ জনের মধ্যে আটজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে হাজি সেলিম, শরীফ ও আশরাফ হোসেন সরকারের দেওয়া জবানবন্দিতে উঠে এসেছে মোবারক হোসেন মোবার নাম। অন্য দুই আসামি টিপ্পন ও মোবার ভগি্নপতি কাজী আলমও মোবাকে দায়ী করেছেন। তবে আশরাফ সরকার জবানবন্দিতে বলেছেন, মোবারক হোসেন মোবাই মূল ভূমিকা পালন করেছেন। অর্থের জোগানদাতা হিসেবে জানিয়েছেন (আশরাফ শুনেছেন), বিএনপি নেতা তারেক আহমদ, নুরুল ইসলাম ও মন্ত্রী রাজুর এপিএস মাসুদুর রহমান মুরাদের নাম। তারা মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছেন। আর মোবা দেশ ছাড়ার আগে নরসিংদীর একটি বিশেষ বাড়িতে হত্যার জন্য শরীফকে মোটা অঙ্কের টাকা ও একটি রিভলবার দিয়েছেন। লোকমানের সঙ্গে নানা কারণে তার চরম বিরোধ তৈরি হয়। সেও লোকমানকে হত্যার পরিকল্পনা করে এক বছর আগে থেকে। এ জন্য ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের হাজি ফারুককে ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন; কিন্তু হাজি ফারুক গ্রুপ লোকমানকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়।
আশরাফ হোসেন সরকার তার জবানবন্দিতে জানান, ঘটনার আগের দিন রাতে (৩১ অক্টোবর) মোবা তাকে মালয়েশিয়া থেকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছিলেন_ 'নামাজ পড়। কালই একটা ভালো খবর পাবি।'
তদন্ত সূত্র জানায়, মামলায় এরই মধ্যে আশরাফ সরকারের পরিবারের ঘনিষ্ঠ আশিকুর রহমান সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, আশরাফ সরকারের বড় ভাই মতিন সরকারের বাড়িতেই কয়েক দফায় লোকমান হত্যা পরিকল্পনার মিটিং হয়।

No comments

Powered by Blogger.