ইরাক-পরিস্থিতি নিয়ে অস্বস্তিতে প্রতিবেশীরা


মার্কিন সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর ইরাক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ও অস্বস্তিতে পড়েছে দেশটির আরব প্রতিবেশীরা। দেশটিতে দলাদলি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি গোষ্ঠীগত ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিণতিতে আরও অনেক রক্ত ঝরবে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। রাজধানী বাগদাদে গত বৃহস্পতিবারের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৮ জনে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এই হামলা দেশটির রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত


করতে পারে। ইরাকের ক্ষমতাসীন দুর্বল রাজনৈতিক জোট এর মধ্যে ভাঙনের মুখে পড়েছে। দেশটির সার্বিক পরিস্থিতি প্রতিবেশী আরব দেশগুলো তীক্ষভাবে নজরদারি করছে।
ইরাকে আকস্মিক সহিংস ঘটনার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্ট তারিক আল হাশেমি প্রধানমন্ত্রী নূরি আল-মালিকিকে দায়ী করেছেন। মালিকিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তাঁর উচিত ছিল দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া।’ বৃহস্পতিবারের হামলার ঘটনার পর গতকাল ইরাকের রাজনৈতিক নেতারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কয়েক বছর আগে সৌদি আরবের বাদশা আবদুল্লাহ মার্কিন কূটনীতিকদের বলেছিলেন, ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাতের মাধ্যমে দেশটিকে ইরানের কাছে ‘সোনার থালায়’ তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র। সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা ২০০৫ সালের এক তারবার্তায় এই তথ্য জানা যায়। সৌদি আরবের সেই অস্বস্তি না কেটে এখন বরং বেড়েছে।
একজন সৌদি কর্মকর্তা বলেন, ‘ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে সুন্নি-শাসিত সৌদি আরবের উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, এখন থেকে ইরাকে ইরানের পরোক্ষ প্রভাবের পরিবর্তে সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে। এখন সেখানে ইরানের ক্ষমতার ভারসাম্য বিধান করার কিছু নেই। কাজেই সেখানকার পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হতে পারে।’
সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগে ইরাকের সুন্নি ভাইস প্রেসিডেন্ট তারিক আল-হাশেমির বিরুদ্ধে শিয়া প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি ক্ষমতাসীন জোটকে পতনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় দেশটির গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনে সাদ্দামের পতন হওয়ার পর সৌদি আরব, ইরান, সিরিয়া ও তুরস্ক ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান থেকে দেশটির লড়াইয়ে সহায়তা দিয়েছে। এতে সুন্নিদের বিরুদ্ধে শিয়া ও কুর্দিদের বিরুদ্ধে আরবদের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এই তৎপরতার অংশ হিসেবে ইরাকের শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকার আশঙ্কা করছে, প্রতিবেশী সিরিয়ার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তাদের দুর্বল সাম্প্রদায়িক ভারসাম্য বিনষ্ট করতে পারে।
ইরাকের শিয়া নেতারা বলছেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন দেশটিতে কট্টরপন্থী সুন্নিদের ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। এতে ইরাকেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা সুন্নি জঙ্গিদের উসকে দিতে পারে।
ইরানের বিশ্লেষক গোলাম হুসেইন মিরভারজি বলেন, ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে দেশটিতে যে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা এই অঞ্চলে ইরান ও সৌদি আরবকে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য আকর্ষণ করবে। তিনি বলেন, ইরান ঘনিষ্ঠ মিত্র সিরিয়াকে হারানোর পর ইরাকে প্রভাব বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী সুন্নিদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছোড়ার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরব বসন্তের প্রভাবে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাহরাইনে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সুন্নিশাসিত বাহরাইনের সঙ্গে সৌদি রাজপরিবারের বেশ সখ্য রয়েছে। একপর্যায়ে সৌদি আরবের সংখ্যালঘু শিয়াদের মধ্যেও সীমিত পরিসরে রাজতন্ত্রবিরোধী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এই সহিংসতার জন্য সৌদি আরব ইরানের দিকে সন্দেহের তীর ছোড়ে।
২০০৮ সালে সৌদি আরবের গোয়েন্দাপ্রধান মুকরিন মার্কিন কূটনীতিকদের বলেন, বাদশা আবদুল্লাহ ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকিকে ‘বিশ্বাস করার মতো নয়’ এবং ‘শতভাগ ইরানপন্থী’ হিসেবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। রয়টার্স ও এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.