মেডিক্যাল প্রশাসন-দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে এখনই

ওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্বাচিপ, আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে ড্যাব। এই দুই সংগঠনের যন্ত্রণায় অস্থির থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য প্রশাসনের পুরোটাই জিম্মি থাকে দলীয় দুটি সংগঠনের কাছে। প্রশাসনের এহেন ত্রিশঙ্কু অবস্থা সরকারের নজরে পড়ে না, এমন নয়। কিন্তু রাজনৈতিক অনুসারীদের দাপট এতই বেশি থাকে যে সেখানে সরকারও না দেখার ভান করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন সরকারের প্রচ্ছন্ন আশীর্বাদ ও


নেকনজর থাকে তাদের সমর্থক সংগঠনটির ওপর_যে কারণে তারা যা ইচ্ছা তাই করতে সাহস পায়। যদি স্বাচিপকে জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে দোষ দেওয়া হবে ড্যাবের ওপর, ড্যাবকে জিজ্ঞেস করা হলে দোষ দেওয়া হবে স্বাচিপের ওপর। পরস্পর দোষারোপের এই খেলায় নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে তারা মরিয়া হয়ে ওঠে। কখনো কখনো তাদের এই রাজনৈতিক খেলা মানবিকতাকে দূরে ঠেলে দেয়। একজন চিকিৎসককে কোথায় বদলি করা হবে, কোথায় তাঁকে রাখা হবে_এ দায়িত্বটি নিশ্চয়ই স্বাচিপ কিংবা ড্যাবের নয়। কিন্তু তারা সেখানে অযাচিত হস্তক্ষেপ করে প্রশাসনকে রাজনৈতিক দলের লেজুড় বানিয়ে নিতে দ্বিধা করে না।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, সংক্ষেপে স্বাচিপ আওয়ামী লীগের সমর্থক চিকিৎসকের দল। তারা এ মুহূর্তে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করছে। এমন কথাও শোনা যায় যে রাজধানী ঢাকায় আসার জন্য কোনো কোনো চিকিৎসককে বড় ধরনের উৎকোচ ব্যয় করতে হয়। আর তা না হলে তাঁকে দলীয় নেতা-কর্মী হতে হয়। সংগত কারণেই বদলি-বাণিজ্য চলার ফলে সেখানে চিকিৎসাসেবা ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। দক্ষতা নয়, রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা অর্থই আজ চিকিৎসকের মূল্যায়নের সূত্র হিসেবে কাজ করে। এ পরিস্থিতি নিয়মিত চলার পরও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নামক সংগঠনটির কিছু করার থাকে না। সরকার বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ প্রতিষ্ঠানটিও স্বাচিপ কিংবা ড্যাবের আওতায় চলে যায়। আর তাদের কর্মকাণ্ড শুধু রাজনৈতিক পরিচিতি বদল ছাড়া কিছুই বদলায় না। বরং এক দল অন্য দলকে ছাড়িয়ে নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য প্রশাসনে নিয়মশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে দ্রুত এই দলীয়করণের থাবা থেকে বিএমএকে মুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে স্বাচিপ এবং ড্যাব সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কর্মকাণ্ড প্রকৃত ও সুস্থ ট্রেড ইউনিয়নের আওতায় পড়ে না। তারা নিয়মনীতিরও ধার ধারে না। সুতরাং ক্ষতিকর এই সংগঠন দুটি সম্পর্কে সরকারকে এখনই ভাবতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.