আসছে কিউডি টিভি by আমিনুর রহমান

কেটে করে যে কোনো জায়গায় নেওয়া যাবে নতুন প্রজন্মের কোয়ান্টাম ডট টিভি। নমনীয় হওয়ায় এ ধরনের টিভি কাপড়ের মতো ভাঁজ করে এবং কোনো কিছুর সঙ্গে মুড়িয়ে রাখা যাবে এলইডি ও এলসিডি টিভি বিনোদন পিয়াসী সব মানুষের হাতের নাগালে আসেনি। ত্রিমাত্রিক টেলিভিশনতো স্বপ্নই বলা চলে। এলইডি-এলসিডি দূরে থাক খোদ ত্রিমাত্রিক টিভিকেই জাদুঘরে তুলে রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। সম্প্রতি ম্যানচেস্টার


বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নতুন প্রযুক্তির বহনযোগ্য টেলিভিশন তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। কোয়ান্টাম ডট প্রযুক্তিতে তারা কোয়ান্টাম ডট টিভি [কিউডি টিভি] তৈরি করে বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করবেন বলে জানিয়েছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নমনীয় হওয়ায় এ ধরনের টিভি কাপড়ের মতো ভাঁজ করে এবং কোনো কিছুর সঙ্গে মুড়িয়ে রাখা যাবে। কিউডি টিভি তৈরিতে অতিক্ষুদ্র যা সাধারণত খালি চোখে দেখা যায় না এমন আলোক নিঃসরণকারী ক্রিস্টাল [স্ফটিক] ব্যবহার করা হবে। এটি মানুষের চুলের এক লাখ ভাগের এক ভাগের সমান। এগুলো যে কোনো নমনীয় প্লাস্টিকের পাতের ওপরে প্রিন্ট করা যায়। এই প্লাস্টিকের পাতগুলো কাজে লাগিয়ে কম পুরুত্বের টিভি পর্দা তৈরি করা হবে। এমনকি কোনো বড় আকৃতির কাগজের ওপর প্রিন্ট করে ঘরের আকৃতির সমান পর্দার টিভি বানানো সম্ভব বলেও জানাচ্ছেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, গঠনগত দিক থেকে কিউডি টিভি অনেকটা বর্তমান সময়ের ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভির মতো হবে। তবে ছবির কোয়ালিটি ও পুরুত্বের দিক থেকে হবে অসাধারণ। এরই মধ্যে উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি নিজেদের কব্জায় নিতে উঠেপড়ে লেগেছে সনি, শার্প, স্যামসাং এবং এলজির মতো বিশ্বের নামিদামি ইলেকট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। সবাইকে পেছনে ফেলে নতুন এ ফর্মুলায় টিভি বানানোর কাজ পেয়েছে স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ন্যানোকো। নির্মাণের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটিকে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দেবেন ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। ন্যানোকো জানিয়েছে, আগামী এক বছরের মধ্যে কিউডি প্রযুক্তির টিভি বাজারে ছাড়া হবে। তবে কিউডির মূল আকর্ষণ নমনীয় কিংবা ভাঁজ করা যায় এমন সংস্করণ বানানো কিছুটা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় ২০১৪ পর্যন্ত সময় নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ন্যানোকোর প্রধান নির্বাহী মাইকেল এডেলম্যান বলেন, আমরা এশিয়ার বড় ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছি। প্রথম ধাপে ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভির পরবর্তী প্রজন্ম কিউডি টেলিভিশন আনা হবে। কিউডির সবচেয়ে বড় সুবিধা, সহজে বহনযোগ্যতা। নিখুঁত ছবির কারণে ত্রিমাত্রিক টিভির মতো সবকিছু চোখের সামনে জীবন্ত মনে হবে। বর্তমান সময়ে প্রচলিত অধিকাংশ টিভি এলসিডি [লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে], যেগুলোকে আলোকিত করতে এলইডি [লাইট এমিটিং ডায়োড] প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। পুরুত্বের দিক থেকে যা ২-৩ ইঞ্চি। তবে এই এলইডিকে সরিয়ে কিউডি বসানো হলে পুরুত্ব অর্ধেকে নেমে আসবে।
বাজারমূল্যের কথা বিবেচনা করে সস্তা ধরনের অর্ধ-পরিবাহী ধাতু খুঁজছে ন্যানোকো। ফলে এলইডির তুলনায় দামও কম হবে। কোয়ান্টাম ডট ব্যবহারে টেলিভিশনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক আলো সদৃশ বৈদ্যুতিক বাতি তৈরি করা সম্ভব। শক্তি বা বিদ্যুৎ খরচের দিক থেকেও এগুলো অনেক সাশ্রয়ী হবে। পাশাপাশি কিউডি থেকে সৌর শক্তিচালিত ডিসপ্লে বানানোর কথাও ভাবছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অজৈব ধাতু গবেষক পল ও'ব্রেইন বলেন, ক্রিস্টালের আকার পরিবর্তন করে আমরা নিঃসৃত আলোর বর্ণ পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। অল্প শক্তি খরচে এ রকম উজ্জ্বল আলো তৈরি করতে পারা ইলেকট্রনিক্স শিল্পের জন্য অনেক বড় ব্যাপার।

No comments

Powered by Blogger.