পদ্মা সেতু-নতুন আশার আলো

দ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিতের ঘোষণায় সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছে। একদিকে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এই দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কাছে জানতে চেয়েছে। দুদক এখন বিশ্বব্যাংকের চিঠির অপেক্ষায় আছে। ওদিকে যোগাযোগমন্ত্রী দাবি করেছেন, পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। পদ্মা সেতু নিয়ে দেশের মানুষের অনেক আশা ছিল।


মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রকল্পটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিল। বিদেশি সাহায্যের আশ্বাসও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তোলায় কাজ শুরুর আগেই দেখা দিল জটিলতা। এই জটিলতা মীমাংসার জন্য অনেক চেষ্টা হয়েছে। জটিলতা নিরসনে অর্থমন্ত্রী নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু কোনো ফল লাভ হয়নি। বিশ্বব্যাংক যেহেতু এই প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থের জোগানদাতা ও সমন্বয়কারী, স্বাভাবিকভাবেই এই সংস্থাটি পিছিয়ে গেলে অন্য দাতাসংস্থাও এই প্রকল্পে অর্থায়ন করতে দ্বিধা করবে বা পিছিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নিয়ে যে অভিযোগ করেছে, সেটা নৈতিক। সংকটটি অনেকাংশেই আস্থার। এ অবস্থায় দেশকে নতুন করে ভাবতে হবে। ইতিবাচক দিকটি হচ্ছে, দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে বিশ্বব্যাংক। নেতিবাচক দিকটিও ভাবতে হবে। যেহেতু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু ধরেই নেওয়া যাক, শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতাসংস্থা এই প্রকল্পে অর্থ সাহায্য বন্ধ করে দিল। তাহলে প্রকল্পের কী হবে? এমনিতেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল একটি দেশ। তার ওপর গত ছয় বছর সময়ক্ষেপণে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্পের কাজ শেষ করার সব ধরনের ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমাদের দেশ পিছিয়ে নেই। পিছিয়ে নেই রড-সিমেন্টসহ নির্মাণ উপকরণ তৈরির দিক থেকেও। বাংলাদেশেই এখন তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের নির্মাণ সামগ্রী। বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে। বাংলাদেশ বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে_তার বড় উদাহরণ খিলগাঁও ফ্লাইওভার ও কুড়িল ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ। এ ছাড়া দেশের বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে কাজ সম্পন্ন হলে তাতে নির্মাণ ব্যয় অনেকাংশে কমে আসে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের বিকল্প নেই। যেকোনো মূল্যে এ সেতু নির্মাণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে বিকল্প ভাবতে হবে। বিকল্প হিসেবে নিজস্ব অর্থায়নের কথা ভাবতেই পারে বাংলাদেশ। একদিকে যখন সেতুর মূল উপকরণের ৭০ শতাংশ দেশেই পাওয়া যায়, তখন সাহস করে কাজে হাত দেওয়া যেতেই পারে। অর্থায়নের ব্যাপারে বহুল আলোচিত পিপিপির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। দেশের স্টক মার্কেট থেকেও টাকা তোলা যেতে পারে। পদ্মা সেতুর জন্য স্টক মার্কেটে গেলে দেশের বাজারও চাঙ্গা হবে। একই সঙ্গে ইনফ্রাস্ট্র্রাকচার বন্ডসহ নানা বন্ড বাজারে ছেড়ে অর্থ জোগাড় করা যেতে পারে। ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যারা অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করতে চায়, তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগ নেওয়া যেতে পারে। তাতে দেশই লাভবান হবে।
অর্থাৎ সরকারের হাতে বিকল্প আছে। এই বিকল্প থেকে পদ্মা সেতুর ব্যাপারে নতুন আশার আলো দেখা যেতে পারে। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, এমন আশাবাদী হওয়া যায়।

No comments

Powered by Blogger.