যে জীবন বিপ্লবের by ফজলুল হালিম রানা

রুণ-তরুণীর টি-শার্টে, পোস্টারে, ক্যাফের দেয়ালে, গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের নোনা-ধরা ডেরায় যার ছবি গোটা বিশ্বজুড়ে শোভা পায় সমান শ্রদ্ধায়; যার পদচিহ্ন আজও স্বপ্ন দেখায় প্যাটাগোমিয়া থেকে রিওগ্রান্ডের অগণিত জনতাকে; তিনি চিরবিপ্লবী আর্নেস্তো চে গুয়েভারা। আজ ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে লাতিন আমেরিকার মহানায়ককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। ১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে বাবা আর্নেস্তো এবং মা সেলিয়া দে লা


সেরনার ঘরে জন্ম নেন চিরচেনা এই বিপ্লবী। চে বুয়েন্স আয়ার্স থেকে চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রি লাভের পর ১৯৫৪ সালে গুয়েতেমালায় অবস্থানকালে জড়িয়ে পড়েন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে । তাকে গুয়েতেমালা ছাড়তে বাধ্য করা হলে তিনি চলে যান মেক্সিকো সিটিতে। সেখানে সাক্ষাৎ হয় নির্বাসিত কিউবান বিপ্লবীদের সঙ্গে, যারা তৎকালীন কিউবান স্বৈরশাসক বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সংগঠিত হচ্ছিলেন। সেখানেই একপর্যায়ে ১৯৫৫ সালের জুলাইয়ে চে পরিচিত হন ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে। এর পর কিউবা বিপ্লব এবং বিজয়, অতঃপর সমাজতন্ত্রের নেশায় লাতিন আমেরিকার ভূগোল পেরিয়ে কখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন, কখনও চীন, কখনওবা আফ্রিকার কঙ্গো। আবার কখনও পেরু, ভেনিজুয়েলা এবং সর্বোপরি বলিভিয়া। একপর্যায়ে ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে তিনি বলিভিয়ায় পেঁৗছান লাতিন আমেরিকার দ্বিতীয় বিপ্লব সূচনা করতে। ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর বলিভিয়ার সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আহত হন চে গুয়েভারা এবং গ্রেফতার হন আমেরিকায় বিশেষ প্রশিক্ষিত বলিভিয়ান সেনাদের হাতে। এর পরদিনই (৯ অক্টোবর) বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সমাজতন্ত্রের দুনিয়ায় ঝড় তোলা এই বিপল্গবীকে। চে বিশ্বাস করতেন বিপ্লবে। উত্তর-আধুনিক বা অধুনান্তিক অথবা প্রলম্বিত আধুনিক কালপর্বে দাঁড়িয়ে চে গুয়েভারাকে শুধু অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, অসম্ভব রোমান্টিক এক বিপ্লবী যোদ্ধা ভাবা যায় না। সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তার সংগ্রাম, তার আদর্শবোধকে বুঝতে হবে, তবে একরৈখিক বা একমাত্রিক দৃষ্টিতে নয়; দেখতে হবে বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। একাধারে যোদ্ধা, কবি, চিকিৎসক, রাজনীতিক, বিপল্গবী চে গুয়েভারাকে আরও নানাভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। চে মানে রাইফেলের শব্দ, চে মানে সমুদ্রের গর্জন, চে মানে বিপ্লব ও মুক্তি। এই বর্ণনার বাইরে আর একটি উপমা বোধহয় থেকে যায়। চে মানে এক আশ্চর্য নীল আকাশ, যেখানে আলোচনার গভীর রঙের ওপর কবিতার মেঘ নৌকা সাজায়_ চে মানে নিপীড়িত মানবতার বৈষয়িক মুক্তি আর আত্মিক মুক্তির বিপ্লব : এক হাতে জ্বলন্ত রাইফেল, অন্য হাতে রক্তকরবীর প্রতীকী মাতন_ চে সমকালের শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী জীবনের দাবানল।
 

No comments

Powered by Blogger.