শুভাঢ্যা খাল দখল চলছেই by অরূপ দত্ত ও ইকবাল হোসেন


ঢাকার কেরানীগঞ্জে শুভাঢ্যা খাল আবার ভরাট ও দখল করে দোকানপাট ও ঘর তৈরি হচ্ছে। এ কারণে শুকনা মৌসুমেও এলাকায় পানিনিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। একই সঙ্গে চলছে খালদূষণ। কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন গত জুন মাসে খাল দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিলেও প্রায় ছয় মাসে তা হয়নি, বরং খালের আরও অংশ দখল হয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুভাঢ্যা খাল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং খাল সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড


(পাউবো) এক কোটি ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। সে সময় পরিবেশবাদী সংগঠনের সহায়তায় পাউবো, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে শুভাঢ্যা খালে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। বুড়িগঙ্গা নদীর মুখ থেকে চরকালীগঞ্জ হয়ে গোলামবাজার পর্যন্ত খালের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশে এই অভিযানে ১৮৬টি ছোট-বড় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। খাল খনন করে পানির প্রবাহও বাড়ানো হয়। উদ্ধার করা জায়গায় পরে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। খাল দখলমুক্ত করতে এটিই ছিল শেষ অভিযান।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর চরকুতুব মসজিদ এলাকায় খালপাড়ে তিনটি আধা পাকা ঘর তোলা হয়েছে। পূর্ব আগানগরে খালের অংশে ১৭টি টিনশেড টংদোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এর একটি মা-মণি গার্মেন্টসের খুচরা বিক্রির দোকান। ওই গার্মেন্টসের পরিচালক শেখ সাদী খান প্রথম আলোকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় নেতা ও আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শেখ মো. জুয়েলের কাছ থেকে তিনি দোকানটি ২০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছেন। মাসে ভাড়া চার হাজার টাকা।
রিংকু প্যান্ট হাউস নামের অপর এক দোকানের কর্মচারী সালাম মিয়া জানান, বছর খানেক আগে দোকানটি ২৫ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে ভাড়া নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ মো. জুয়েল বলেন, টংঘরগুলো তিনি একা নির্মাণ করেননি। এর সঙ্গে অনেকে জড়িত। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিএনপির স্থানীয় নেতারা জোড়াব্রিজ এলাকায় খালের জায়গা দখল করে টংদোকান তৈরি করে ভাড়া দিয়েছিলেন।
চরকালীগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর সংযোগস্থল থেকে গোলামবাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে খাল দুই পাশেই ভরাট হয়ে সরু হয়ে গেছে। চরকালীগঞ্জের বাসিন্দা আবদুল আলী বলেন, ‘দখল হতে হতে খালটি চোখের সামনেই নর্দমা হয়ে গেছে। বর্ষায় কিছু খেয়ানৌকা ও ট্রলার চলাচল করে। কিন্তু শুকনা মৌসুমে খালে পানি থাকে না বললেই চলে। খালটি রক্ষার জন্য এখনই পুনঃখনন দরকার।
দূষণ: দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ঝাউবাড়ী সেতুর কাছে খালের ওপর দেখা যায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। উত্তর চরকুতুব, কবুতরপাড়া, কালীগঞ্জ জোড়াব্রিজ, চরকুতুব প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন স্থানসহ খালের বেশ কয়েকটি স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এলাকায় আবর্জনা ফেলার জায়গা না থাকায় দিনদুপুরেও অসচেতনভাবে তা খালে ফেলায় ধীরে ধীরে খালের তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এসব আবর্জনার মধ্যে গৃহস্থালি বর্জ্যের পাশাপাশি তৈরি পোশাক কারখানার পরিত্যক্ত কাপড়ের টুকরা এবং বাজারের আবর্জনাও রয়েছে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, শুভাঢ্যা খাল বারবার দখল হচ্ছে। দখলমুক্ত করতে সরকারের অনেক টাকাও খরচ হচ্ছে। খালটি রক্ষার জন্য দখলদারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম ফখরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি জলাশয় বিশেষ করে খাল দখল দণ্ডনীয় ও ঘৃণ্য অপরাধ। দখল ও দূষণের কারণে ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলা খালটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে শিগগির পুনঃখনন ও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.