দ্বিখণ্ডিত সিটি করপোরেশন-নাগরিক সেবা নিশ্চিত করুন

তিমধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভাজন নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়ে গেছে। কেউ এর পক্ষে, কেউ বা বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রাজধানী শহরের উন্নয়নের পথে এই বিভাজন সহায়ক হবে, নাকি অন্তরায়_ তা নিয়েও পরস্পরবিরোধী মত পাওয়া গেছে। পক্ষে-বিপক্ষে মত যা-ই থাকুক, সিটি করপোরেশন যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়া হঠাৎই ভাগ হয়ে গিয়েছে_ এ বিষয়ে কেউই হয়তো দ্বিমত করবেন না। সিটি করপোরেশনের মতো বৃহৎ সেবা


প্রতিষ্ঠানকে ভাগ করার আগে অতিপ্রয়োজনীয় যে প্রস্তুতি দরকার, তা করা হয়নি। বরং, ভাগের পর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এবং তাও চলছে ঢিমেতালে। ফলে, সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকরা নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবারের সমকালে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা বেদনাদায়ক। দৈনন্দিন সেবার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের_ এ তথ্য নাগরিকরা জানেন। সিটি করপোরেশনের কর্তারাও বিষয়টি নিয়ে অনবহিত নন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নাগরিকরা দৈনন্দিন সেবার জন্য সিটি করপোরেশনের দ্বারস্থ হন না; করপোরেশনও দায়িত্ব পালন করে না। মশা নিধন, রাস্তার বাতি জ্বালানো এবং ময়লা-আবর্জনা পরিবহনের মতো কিছু কাজ সিটি করপোরেশন নিয়মিত করে। কিন্তু বাস্তবে মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের কাজ কতটা উপকার করে_ তা নিয়ে বিশেষ সন্দেহ আছে। রাস্তার বাতিও সবসময় জ্বলে না। ময়লা-আবর্জনা সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে যথাসময়ে অপসারিত হয় না। এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। বর্তমানে প্রশাসক শাসিত সিটি করপোরেশনেও এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। উল্টো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাড়তি উপদ্রব যুক্ত হয়েছে। আগের সিটি করপোরেশনে কাউন্সিলর অফিসগুলো যে নাগরিক সনদ, চারিত্রিক সনদপত্র দেওয়ার সামান্য কাজ করত, তাও বর্তমান ব্যবস্থায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বা ভোগান্তি বেড়েছে। কোনো পাড়ায় মশক নিধন কর্মসূচি হলো না কেন_ সে খবর নাগরিকরা সঙ্গত কারণেই নেন না। ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস নোংরা থাকলে নাক চেপেই পারাপার হন। রাস্তার ব্যস্ত মোড়ে আবর্জনার স্তূপ জমলেও রা করেন না। কিন্তু অতি প্রয়োজনে সনদপত্র তোলার জন্য কাউন্সিলর অফিসে হাজির হতে হয় সবাইকে। সেই সনদপত্রের সেবা এখন বিঘি্নত। স্থানীয় অফিসগুলো কার্যকর হয়নি বলে অল্প সময়ে সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই জানেন না, তিনি কোন সিটি করপোরেশনের কাছে সেবা নিতে যাবেন। প্রয়োজনীয় প্রচার নেই, জানাবার ব্যবস্থা নেই। নাগরিকদের এ ভোগান্তির ওপর আরও ভোগান্তি আছে। দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে কার্যত উন্নয়ন কর্মসূচি স্তিমিত হয়ে এসেছে। করপোরেশন দুটি নীতিনির্ধারণী ছোট-বড় সিদ্ধান্তের জন্য মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে। পরিস্থিতিটি মোটেও সুখকর নয়। পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট, করপোরেশন বিভাজনের আগে প্রাথমিক প্রস্তুতিগুলো সম্পন্ন হয়নি। ফলে, প্রথম ধাক্কায় বিভাজনের খারাপ দিকগুলোই সামনে আসছে। সরকারের জন্য এটি সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। তাই নাগরিকদের প্রার্থিত সামান্য সেবাটুকু নিশ্চিত করার জন্য সিটি করপোরেশনের কর্তাদের এখনই তৎপর হতে হবে। প্রয়োজনীয় অফিস তৈরি করে, প্রচারের মাধ্যমে সেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা দ্রুত আসা উচিত। পাশাপাশি, দুই সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের সমতা বজায় রাখতে সমন্বয় ব্যবস্থাও তৈরি করা দরকার। স্তিমিত বা বন্ধ হওয়া উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলোও চালু হওয়া দরকার। নইলে, সিটি করপোরেশন বিভাজনের সুফল নগরবাসী পাবে না। আমরা মনে করি, বিভাজনের আগে না হলেও এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো তৎপর হবে। শুধু পুরনো সেবার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করাই নয়, নতুন সেবার দিকেও নজর দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.