সরকারি-বেসরকারি ঋণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সংকটে by ওবায়দুল্লাহ রনি

রম অর্থ সংকটে রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংক। এতদিন শুধু বেসরকারি খাতের ঋণ উপেক্ষিত হলেও বছর শেষে এসে সরকারকেও আর ঋণ সরবরাহ করতে পারছে না এসব ব্যাংক। বছরজুড়ে বেসরকারি খাতে বড় অঙ্কের দু'চারটি যে ঋণ দিয়েছে, তা দেওয়া হয়েছে আগের ঋণ আছে এমন গ্রাহককে। খেলাপি থেকে বাঁচাতেই ওই সব ঋণ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পে বিনিয়োগ, কমছে কর্মসংস্থান। প্রকৃত


শিল্প উদ্যোক্তারা হচ্ছেন ঋণবঞ্চিত। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা ভেস্তে যাবে। যার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সামগ্রিক অর্থনীতি। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আবদুুস সালাম মুর্শেদী সমকালকে বলেন, উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে মেয়াদি ঋণ নিয়ে সাধারণত শিল্পে বিনিয়োগ করে থাকেন। এ ছাড়া স্বল্প সময়ের জন্য চলতি মূলধন ঋণও নেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে অপেক্ষাকৃত সুদ হার কম থাকায় সেখান থেকে ঋণ নেওয়া গেলে
উদ্যোক্তারা বেশি উপকৃত হন। তবে এসব ব্যাংক এখন তা দিতে পারছে না। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য এটি নেতিবাচক। এ জন্য সরকারের ঋণের চাপ কমানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সূত্র জানিয়েছে, এতদিন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসব ব্যাংক সরকারকে ঋণ সরবরাহ করে আসছিল। সরকার বা রাষ্ট্রীয় করপোরেশনগুলোর ঋণ চাহিদা পূরণ করতে তাদের তেমন সমস্যা হচ্ছিল না। তবে বছর শেষে এসে এখন আর ঋণ দেওয়ার মতো টাকা নেই এসব ব্যাংকের কাছে। যে কারণে আগের নেওয়া বেশ কিছু ঋণ সরকারকে সমন্বয় করতে হয়েছে। বিশেষ করে চলতি বছরের পাঁচ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যেখানে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তা কমিয়ে এখন ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একাধিক বৈঠকে এসব ব্যাংকের পক্ষ থেকে এভাবে ঋণ নেওয়ায় উদ্বেগ জানানোর ফলে সরকার ঋণ নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিপিসির কাছে এসব ব্যাংকের বিপুল অর্থ পাওনা থাকায় সরকারের ব্যাংক ঋণ কমালেও তাদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই।
সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বড় অঙ্কের কোনো ঋণ অনুমোদন দিতে পারছে না তারা। মূলত সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ সরবরাহ করতে গিয়ে তাদের এ অবস্থা হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে বলে তারা জানিয়েছেন। ব্যাংকগুলোর বড় অঙ্কের ঋণ অনুমোদন করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি প্রয়োজন। তবে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার মতো সক্ষমতা না থাকায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এ ধরনের কোনো ঋণ প্রস্তাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে ঋণ সরবরাহ করতে গিয়েই এসব ব্যাংককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেখানে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক। তবে আশানুরূপ বৈদেশিক বিনিয়োগ বা সাহায্য এলে এ অবস্থা থাকত না। তিনি বলেন, সরকারের ঋণের চাপে প্রকৃত শিল্প উদ্যোক্তারা ঋণবঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি উদ্বেগজনক হলেও এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করার কিছু থাকে না।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের এমডি এসএম আমিনুর রহমান সমকালকে বলেন, 'সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট (একক ব্যক্তির ঋণসীমা) অতিক্রম করলে সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তবে এ বছর সে ধরনের কোনো ঋণ না থাকায় সেটি পাঠাতে হয়নি।'
চার ব্যাংকের মোট ঋণ বিতরণ :সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ২১ কোটি ৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ২৯ হাজার ৩৮০ কোটি ৮৭ লাখ, জনতা ব্যাংক ২৩ হাজার ৭১০ কোটি ১৬ লাখ, অগ্রণী ব্যাংক ১৮ হাজার ৮৩৭ কোটি ৪৩ লাখ এবং রূপালী ব্যাংকের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৯২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এসব ঋণের মধ্যে পঞ্চাশ হাজার শিল্প ও এসএমই উদ্যোক্তার মাঝে চার ব্যাংক ২২ হাজার ২৯০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক দিয়েছে ১১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা।
এসএমই ও শিল্প খাতে জনতা ব্যাংকের বিতরণকৃত উল্লেখযোগ্য ঋণের মধ্যে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের মাঝে এক হাজার ১৭৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে ২৯৯ কোটি টাকা। আর শিল্প খাতের ৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে দেওয়া হয়েছে ৮৭৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ডাচ্-বাংলা পাওয়ারকে দেওয়া হয়েছে ২০০ কোটি, শাহরিস কম্পোজিটকে ৮৬ কোটি, অ্যাপেক্স অ্যাডল ফুটওয়্যারকে ৪৯ কোটি, শাহ সিমেন্ট ৪০ কোটি, কাজী স্যাটেলাইট টেলিভিশন ৩৯ কোটি, তমিজ টেক্সটাইল ৭ কোটি ৫৬ লাখ এবং ফারইস্ট নিটিং ডাইং নামে একটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে পাঁচ কোটি টাকা।
এসএমই ও শিল্প খাতে অগ্রণী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে এসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ব্যাংকটি এর মধ্যে শিল্প খাতের নামে উল্লেখযোগ্য তিনটি ঋণ দিয়েছে। সেখানে দেওয়া হয়েছে ২২১ কোটি টাকা। অভিযোগ উঠেছে, এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে আগের ঋণ যেন খেলাপি না হয় সে জন্য। যে কারণে সারা বছর বড় অঙ্কের ঋণের অনুমোদন না করালেও বছর শেষে এসে তড়িঘড়ি করে এসব ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্টিল মিলকে গত নভেম্বরে ১২৯ কোটি টাকার একটি ঋণ দেওয়া হয়। এতে প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২২৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ স্টিল মিলের আগে নেওয়া ৯৪ হাজার কোটি টাকা যেন খেলাপি না হয় সেজন্য বড় অঙ্কের এ ঋণটি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে ফরিদপুর জুট ফাইবারসকে দেওয়া হয়েছে ৬২ কোটি টাকা। এর আগেও ওই প্রতিষ্ঠানটির বড় অঙ্কের ঋণ ছিল। তবে পরিশোধের পর সর্বশেষ তার স্থিতি দাঁড়িয়েছিল ২ কোটি টাকা। এতে বর্তমানে ফরিদপুর ফাইবারসের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৪ কোটি টাকা। আর দেশ এনার্জি নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ কোটি টাকার একটি ঋণ দেওয়া হয়েছে।
সাধারণভাবে সোনালী ব্যাংক এসব খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়ে থাকে। তবে সরকারের ঋণের চাপে এবার তাদের সক্ষমতা কমেছে। ব্যাংকটি এসএমই ও শিল্প খাতে এবার মাত্র ৭ হাজার ২২০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এ ছাড়া বিপিসির কাছে দায় দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। আর রূপালী ব্যাংক শিল্প ও এসএমই খাতে বিতরণ করেছে ২৫১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ব্যাংকটির মূলধন কম থাকায় বরাবরই তাদের ঋণ বিতরণ কম থাকে।
এ ছাড়া বড় অঙ্কের ঋণের মধ্যে পোশাক ও বস্ত্র খাতে সোনালী ব্যাংকের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক এক হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। আর রূপালী ব্যাংক ধাতব পণ্য খাতে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বা ৭২৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে।
সূত্র বলছে, চলতি বছর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের বড় অঙ্ক সরবরাহ করতে হয়েছে সরকার ও রাষ্ট্রীয় করপোরেশনগুলোকে। একই সঙ্গে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেও ব্যাপকভাবে ঋণ নিচ্ছে সরকার। যদিও সম্প্রতি সে প্রবণতা কিছুটা কমেছে। এর পরও গত ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮৭১ কোটি টাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সরবরাহ করতে হয়েছে। এসব ঋণের বেশিরভাগই জোগান দিয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংক। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে এসব ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকার মতো। বিপিসির আমদানি দায় পরিশোধ বাবদ শুধু সোনালী ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের চার হাজার ২০০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৩ হাজার কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকেরও বড় অঙ্কের পাওনা দাঁড়িয়েছে। অর্থ সংকটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে তা পরিশোধ করতে পারছে না রাষ্ট্রীয় এ করপোরেশনটি।
যোগাযোগ করা হলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুুল হামিদ সরকার ঋণের চাপের বিষয়টি স্বীকার করে সমকালকে বলেন, সরকারকে ঋণ সরবরাহ করতে গিয়ে মুদ্রাবাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে_ এমন তথ্য সত্য। তবে এটিকে সমস্যা হিসেবে দেখলে চলবে না। কেননা, সরকার যেহেতু বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পণ্য আমদানি ও ভর্তুকিতে এসব অর্থ ব্যয় করছে। তাই দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সাময়িক এ সংকট একটি ছোট সমস্যা। পর্যায়ক্রমে এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবির) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আমিন সমকালকে বলেন, সামগ্রিক অর্থনীতিতে টাকার সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় তাদের এখন বেছে বেছে ঋণ দিতে হচ্ছে। আইএমএফসহ বৈদেশিক ঋণ পেলে এটি এখনই কেটে যাবে। এ ছাড়া রফতানি বা রেমিট্যান্স বাড়লে সামগ্রিকভাবে এ সংকট বেশি দিন থাকবে না।
চার ব্যাংকের মোট দায় :ব্যাংকগুলো কর্তৃক সংগৃহীত আমানত ও মূলধনকে দায় বলে। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার বাণিজ্যিক ব্যাংকে মোট দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৭৯৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের রয়েছে ৫১ হাজার ৩৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। জনতা ব্যাংকে রয়েছে ৩৮ হাজার ৯১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকে ২৮ হাজার ৫০৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং রূপালী ব্যাংকে রয়েছে ১১ হাজার ২৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
মোট খেলাপি :সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের ৭৯ হাজার ২১ কোটি ৮ লাখ টাকার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। বাকি ৬৭ হাজার ৮২৫ কোটি ১১ লাখ টাকা অশ্রেণীকৃত থাকলেও এর মধ্যে ২ হাজার ৪৬১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা খেলাপির আগের অবস্থায় (এসএমএ) রয়েছে। সোনালী ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৬০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ২৩ দশমিক ০১ শতাংশ। জনতা ব্যাংকে এক হাজার ২৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকে ২ হাজার ৬৭২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বা ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর রূপালী ব্যাংকে ৪৯৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
মূলধন সংরক্ষণ :বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে বিরূপ পরিস্থিতিতে সহনক্ষমতা বা স্ট্রেস টেস্টিং করে থাকে। ৩০ সেপ্টেম্বরের তথ্য অনুযায়ী সোনালী ও রূপালী ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ সংরক্ষণে সক্ষম হলেও মূলধনের অভাবে জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক সংরক্ষণ করতে পারেনি। এ সময়ে সোনালী ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, জনতা ব্যাংকের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংকের ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংকের ১০ দশমিক ২৪ শতাংশ। ব্যাসেল-২ নামে পরিচিত মূলধন পর্যাপ্ততার আন্তর্জাতিক নিয়মকানুনের আলোকে ঝুঁকিনির্ভর সম্পদের নূ্যনতম ১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ :প্রচলিত বিধি মোতাবেক একটি ব্যাংক শেয়ারবাজারে মোট দায়ের ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। গত সেপ্টেম্বর ভিত্তিতে শেয়ারবাজারে এসব ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা তাদের মোট দায়ের ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে এক হাজার ২৬২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের রয়েছে ৯৪৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অগ্রণী ব্যাংকের বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর রূপালী ব্যাংক বিনিয়োগ করেছে ৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা মোট দায়ের দশমিক ৮০ শতাংশ।
বৈদেশিক মুদ্রা :সরকারের আমদানি দায় মেটাতে গিয়ে চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর। আর সরকারের যে কোনো আমদানির ঋণপত্র যেহেতু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে খোলা হয়, তাই এ নিয়েও তাদের ওপর রয়েছে বড় ধরনের চাপ। বিশেষত জ্বালানি আমদানির দায় মেটাতেই এই চাপ বলে জানা গেছে। চাপ সামলে নিতে ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে সরাসরি বিক্রি ও ধারের মাধ্যমে চার ব্যাংককে সরবরাহ করেছে ১১১ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর মধ্যে সরাসরি বিক্রি করা হয়েছে ৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর স্বল্প সময়ের জন্য ধার হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৫০ কোটি ডলার। গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ডলার ধার দিয়েছে তার মধ্যে ব্যাংকগুলো এখনও ৪৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে পারেনি। বিপিসির আমদানি বাবদ সরকারের কাছে পাওনা পরিশোধ না করায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ধার পরিশোধ করতে পারছে না বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.