এ সপ্তাহের সাক্ষাৎকার-মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য কিছুটা সময় লাগবে by অধ্যাপক এম এ তসলিম

র্থমন্ত্রী উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির জন্য বড় চাপ হিসেবে স্বীকার করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এ তসলিম প্রথম আলো: উচ্চহারে মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই উদ্বেগের বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এম এ তসলিম: অর্থমন্ত্রী মহোদয় স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছেন যে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির বড় ধরনের চাপ দেখা


দিয়েছে। তাঁর এই স্বীকারোক্তি ও উদ্বেগ ইতিবাচক। কেননা মূল্যস্ফীতি যে বড় সমস্যা, তা তিনি বিবেচনায় নিয়েছেন, আমলে নিয়েছেন। অর্থাৎ সমস্যাটাকে স্বীকার করা হয়েছে। সমস্যা স্বীকার করার মানেই হলো যে সমাধানের একটা অর্থবহ বা কার্যকর পথ বের হবে। যতক্ষণ সরকার বা নীতিনির্ধারকেরা সমস্যাকে স্বীকার করতে চান না, ততক্ষণ কিন্তু সমাধানের কোনো পদক্ষেপ প্রত্যাশা করা যায় না।
প্রথম আলো: কিছুদিন আগেও অর্থমন্ত্রী তথা সরকার মূল্যস্ফীতির চাপকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চাননি। তাহলে এখন কেন বিবেচনায় নিচ্ছেন?
এম এ তসলিম: মূল্যস্ফীতির হার যখন ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় ও মাসের পর মাস চলতে থাকে, তখন তার অভিঘাত বা চাপ অস্বীকার করা কিংবা এড়িয়ে যাওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়, উচিতও নয়। মার্চ মাস থেকেই মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের ওপর রয়েছে। দেশের অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরে এটা নিয়ে বলে আসছিলেন। ইদানীং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এ বিষয়ে জোরালোভাবে বলেছে। অর্থমন্ত্রী নিজেও বাস্তবতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। কাজেই কঠিন বাস্তবতা এড়িয়ে না গিয়ে তা স্বীকার করে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেদিকে মনোনিবেশ করাই সবচেয়ে ভালো।
প্রথম আলো: অর্থমন্ত্রী এখন কী করতে পারেন? তাৎক্ষণিক কোনো সমাধান কি আছে?
এম এ তসলিম: মূল্যস্ফীতির চাপ তো আর এক দিনে বা হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। ধীরে ধীরে সমস্যাটা গড়ে উঠেছে। তাই চট করে তা প্রশমন করা যাবে না। সময় লাগবে। এ জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, সঠিক ব্যবস্থাপনার দিকে যেতে হবে। প্রথমত, রাজস্ব নীতিকে সক্রিয় করতে হবে। এর মানে হলো ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ কমাতে হবে। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত ব্যয়ের রাশ টেনে ধরতে হবে। আয়ের তুলনায় সাধ্যাতিরিক্ত ব্যয় বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও ঘাটতি তৈরি করেছে। অর্থমন্ত্রী কিন্তু এ-ও বলেছেন যে মূল্যস্ফীতি শুধু আমদানিজনিত কারণেই হয়নি, অভ্যন্তরীণ নীতি ব্যবস্থাপনার কারণেও হয়েছে।
প্রথম আলো: অভ্যন্তরীণ নীতি ব্যবস্থাপনা কারণ বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
এম এ তসলিম: অর্থমন্ত্রী কী বোঝাতে চেয়েছেন, এটা তিনিই সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। তবে তিনি ভর্তুকির চাপের কথা উল্লেখ করেছেন। হয়তো পুরো বিষয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ তিনি বিস্তারিত সামনে তুলে ধরবেন। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিও বোঝা যাবে। তবে রাজস্ব নীতির সঙ্গে মুদ্রানীতিকে সংগতিপূর্ণভাবে পরিচালনা করাটাও এখন জরুরি।
প্রথম আলো: বাংলাদেশ ব্যাংক তো মুদ্রানীতি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক করে এনেছে। খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতিকে সেজন্যই অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তাহলে আর কতটা নিয়ন্ত্রণ বা সংকোচনমূলক করতে হবে?
এম এ তসলিম: মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করলেও এর প্রভাব পড়তে অনেক সময় লাগে। গত বছরের শেষ ভাগ থেকে এটা করা শুরু হয়। তবে এ বছরের মাঝামাঝি এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও সংকোচনমুখী হয়েছে। এর প্রভাবে এখন ঋণের প্রবাহ অর্থাৎ অর্থের জোগান হ্রাস পাচ্ছে। মূল্যস্তর অবশ্য এত তাড়াতাড়ি হ্রাস পাবে না। তা ছাড়া খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতির হারও তো গত কয়েক মাস ধরে বেড়ে চলেছে। জুলাইয়ে যা ছিল সাড়ে ছয় শতাংশ, নভেম্বর মাসে তা হয়েছে ৯ শতাংশ। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও সতর্ক হতে হবে। আর মূল্যস্ফীতির বিষয়ে তথ্য-পরিসংখ্যান যথেষ্ট নির্ভুল ও হালনাগাদ করা প্রয়োজন। তা না হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
[সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আসজাদুল কিবরিয়া]

No comments

Powered by Blogger.