রাজশাহী বণিক সমিতি-৮ বছরে ২৮ কোটি টাকার অনিয়ম by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

রাজশাহী শিল্প ও বণিক সমিতির গত আট বছরের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির এক প্রতিবেদনে প্রায় ২৮ কোটি টাকার অনিয়মের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। দুই মাস তদন্ত শেষে গত ১০ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটির প্রধান অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কে এন এ মো. নজরুল হক চেম্বার কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন।


প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৮ মার্চ থেকে ২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অনিয়ম হয়েছে। গত ৫ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের ভিত্তিতে এই তদন্ত কমিটি করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান চৌধুরী সারওয়ার জাহান, অবসর-পরবর্তী ছুটিতে থাকা কমার্শিয়াল অডিট ডিপার্টমেন্ট—রাজশাহীর অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস কর্মকর্তা আবদুল মজিদ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খুরশিদ আলম এবং রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক হাসান মিল্লাত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চেম্বারের বিধি অনুযায়ী সাময়িক খরচের জন্য মাত্র ৩০০ টাকা হাতে রাখার নিয়ম থাকলেও ওই সময়ের মধ্যে দৈনিক ৩১৯ টাকা থেকে সর্বোচ্চ সোয়া দুই কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। গত আট বছরে এভাবে নগদ টাকা হাতে রেখে অনিয়ম করা হয়েছে ২৬ কোটি ৯৬ লাখ ৮১ হাজার ৪১ টাকা। প্রতিবেদনে অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চেম্বার কর্তৃপক্ষ একটি নির্মাণপ্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ২৯২ টাকার ভ্যাট এবং আয়কর কর্তন ছাড়াই সমুদয় বিল পরিশোধ করে দিয়েছে। একইভাবে কর্তৃপক্ষ ৩১টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আসবাব, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ছাপার কাজ ও নিরীক্ষা বাবদ এক লাখ ৩২ হাজার ১৭০ টাকা, আটজন ঠিকাদার ও সরবরাহকারীর বিল পরিশোধকালে আট লাখ সাত হাজার ৮৩৩ টাকা এবং আইন পরামর্শকের বিল পরিশোধকালে পাঁচ লাখ ২৯৭ টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের বিল ৩২ হাজার ৮৩৫ টাকা হলেও অতিরিক্ত এক লাখ ২৭ হাজার ২৭৬ টাকা অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭১৫ টাকা কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে কর ফাঁকির টাকা এবং চেম্বারের ক্ষতির টাকা দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিনা দরপত্রে চেম্বার ভবন নির্মাণের জন্য ৫৬ লাখ ৩৫ হাজার ৩৮৮ টাকা এবং যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন জিনিস কেনায় ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৫১৮ টাকা খরচ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসবের নথি রাখা আবশ্যক হলেও কর্তৃপক্ষ তা রাখেনি।
ভবন নির্মাণের কাজ দেরিতে শেষ হলেও ঠিকাদারের বিল থেকে লিকুইডিটি ড্যামেজ কাটেনি কর্তৃপক্ষ। এ জন্য চেম্বারের ১২ লাখ ৯৪ হাজার ২১২ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহার করায় ঠিকাদারের বিল থেকে চার লাখ ৪১ হাজার ৮৪ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু নির্মাণ-ত্রুটি সারানো হয়নি।
প্রতিবেদনে অতিথি আপ্যায়নে এক লাখ ৪৮ হাজার ১৫৪ টাকা, কর্মচারীদের অধিক হারে বেতন দিতে গিয়ে ৩৮ হাজার ৮৩৩ টাকা ও নিরীক্ষা সংস্থার কর্মকর্তাদের যাতায়াত ভাতা ১৫ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় এবং সমন্বয়হীন ৬৫ হাজার টাকা অগ্রিম বিল প্রদানকে অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির প্রধান নজরুল হক বলেন, ‘প্রতিবেদনের প্রতিটি অনুচ্ছেদে আমরা কিছু সুপারিশ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যতটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির হিসাব ঠিক নেই। এখানে ভালো কাজ জানা লোক থাকা দরকার।’
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে চেম্বারের প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, তিনি তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন। ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা অনুমোদন করেছে। মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চেম্বার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.