পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সন্তু লারমার সহায়তা চাইলেন গওহর

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। গতকাল শুক্রবার সকালে রাঙামাটিতে এক বৈঠকে তিনি এ সহায়তা চান। জবাবে সন্তু লারমা তাঁকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
রাঙামাটি সফরকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন গওহর রিজভী।


সূত্র জানায়, গতকাল গওহর রিজভী সন্তু লারমার সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সভাকক্ষে সকাল ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এ সময় তিনি সন্তু লারমাকে জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অবস্থা সম্পর্কে জানতে এসেছেন। সরকারের বর্তমান মেয়াদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। এ ব্যাপারে সন্তু লারমার সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ সময় সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে অকার্যকর করে রেখেছে। পার্বত্য ভূমি কমিশন চুক্তি অনুয়ায়ী কাজ না করায় এবং পার্বত্য চুক্তির সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিরোধাত্মক ধারা সংশোধন না হওয়ায় ভূমি বিরোধ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সন্তু লারমা অভিযোগ করেন, সরকারের অনেক মন্ত্রী, নেতা চুক্তি বাস্তবায়ন চান না। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে ভুল ধারণা দেন।
বৈঠক শেষে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে গওহর রিজভী বলেন, ‘সন্তু লারমার সঙ্গে আমার অনেক দিনের বন্ধুত্ব। তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছি।’
এরপর গওহর রিজভী দুপুর ১২টায় রাঙামাটি সার্কিট হাউসে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় গওহর রিজভী নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর শান্তির দূত বলে উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্থানীয় জনসাধারণ ও সুশীল সমাজের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ সময় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী পার্বত্য চুক্তির ৮০ ভাগ বাস্তবায়ন হওয়ার যে বক্তব্য দেন, তার বিরোধিতা করে নাগরিক কমিটির নেতারা বলেন, এ ধরনের অপপ্রচার সাধারণ মানুষকে ভুল ধারণা দেয়। তাঁরা বলেন, চুক্তির আওতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হলেও সেসব প্রতিষ্ঠানের কাজ করার জন্য যে আইন ও বিধিমালা প্রয়োজন, সেসব কিছুই হয়নি। সে কারণে চুক্তির আওতায় গঠিত সব কমিটি ও প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়ে রয়েছে। সম্প্রতি ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর এখতিয়ার খর্ব করে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশ জারি করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানান নাগরিক কমিটির নেতারা। এ সময় উপস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের চির্িঠ উপস্থাপন করা হয়। এরপর তা সংশোধন করার আশ্বাস দেন পার্বত্য সচিব।
বৈঠকে নাগরিক কমিটির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপসচিব উক্য জেন মগ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী, প্রবীণ আইনজীবী জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান, রকি চাকমা ও যশেশ্বর চাকমা।

No comments

Powered by Blogger.