ফসলি জমিতে স্লুইসগেট অধিগ্রহণ করা হয়নি by সত্যজিৎ ঘোষ


ধিগ্রহণ না করেই ফসলি জমিতে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হচ্ছে। শরীয়তপুর ও মাদারীপুরে কীর্তিনাশা নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এগুলো নির্মাণ করছে। আর কাজ শুরু না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৩৫ লাখ টাকার বিল তুলেছে। শরীয়তপুর পাউবো সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে সুরেশ্বর পাইলট প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া কীর্তিনাশা নদীর তীরে ও মাদারীপুর সদর উপজেলার রাজারচর এলাকায় স্লুইসগেটের নির্মাণকাজ শুরু হয়।


১ দশমিক ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১ দশমিক ৫০ মিটার প্রস্থ স্লুইসগেট দুটিতে তখন এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করে আংশিক কাজ করা হয়। গেট দুটি নির্মাণ করা হয় ফসলি জমি কেটে পুকুর বানিয়ে। সেই জমিগুলো অধিগ্রহণ করা হয়নি।
আঙ্গারিয়া এলাকার পশ্চিম পরাসর্দ্দি মৌজার সাত ব্যক্তির পাঁচ একর ও রাজারচর এলাকার আট ব্যক্তির চার একর ফসলি জমির মধ্যে স্লুইসগেট দুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বাকি অংশ সমাপ্ত করার জন্য পাউবো ২৩ জানুয়ারি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়। প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় চার কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ বছরও জমিগুলো অধিগ্রহণ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প এলাকায় কাজ করতে গেলে এলাকার মানুষ তাদের বাধা দেয়।
পাউবো ২০১০ সালে দরপত্র আহ্বান করে চার কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে আবুল কালাম আজাদ ও রূপালী কনস্ট্রাকশনকে ২৩ জানুয়ারি কার্যাদেশ দেয়। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠান দুটি কাজ শুরু না করেও ৩৫ লাখ টাকা বিল তুলেছে।
সরেজমিনে আঙ্গারিয়া ও রাজারচরে গিয়ে দেখা যায়, ১৯৯৮ সালে স্লুইসগেট দুটির যে অংশ নির্মাণ করা হয়েছিল, তার আঙ্গারিয়া অংশ পুকুরের মতো জলাশয়ে তলিয়ে আছে। আঙ্গারিয়ায় নতুন করে কাজ শুরু করার জন্য পাথর ও রড আনা হয়েছে। রাজারচরে স্লুইসগেটের কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে আছে। সেখানে কাজ করার জন্য পাশের নিচু স্থানে বালি ভরাটের কাজ চলছে।
পশ্চিম পরাসর্দ্দি গ্রামের সেলিম খান বলেন, ‘আমাদের ফসলি জমিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইসগেট নির্মাণ করেছে। ১৯৯৮ সালে এখানে কিছু কাজ করেছিল, তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসলের ক্ষতিপূরণ ও জমি অধিগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়। আমাদের জমি নষ্ট করেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত অধিগ্রহণ করেনি। জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে আমরা বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি।’
রাজারচর গ্রামের জালাল উদ্দিন সরদার বলেন, খালের পাশের ফসলি জমিতে স্লুইসগেট নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে খালের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ এলাকার ১০ গ্রামের মানুষ খাল দিয়ে যাতায়াত করে। খালের মুখ বন্ধ করা হলে মানুষ দুর্ভোগে পড়বে।
রূপালী কনস্ট্রাকশনের মালিক অমল দাস বলেন, ‘১৯৯৮ সালে কাজটি আমরা করেছিলাম। আমরা অনেক লোকসানে আছি। এ বছরও কাজটি পেয়েছি। এখন অর্থ বরাদ্দ নিয়মিত পেলে লোকসান পুষিয়ে ভালোভাবে কাজটি সম্পন্ন করা যাবে। কিছু কাজ করার পর ১৮ লাখ টাকা বিল তুলেছি। জমি অধিগ্রহণ না করায় এলাকার মানুষ কাজ করতে বাধা দিয়েছে। তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে কাজটি শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছি।’
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মালেক বলেন, ‘সুরেশ্বর পাইলট প্রকল্প ২০০৪ সালে বন্ধ হয়ে গেছে। আরও এলাকা বাড়িয়ে নতুন করে ২০০৯ সাল থেকে সুরেশ্বর বন্যানিয়ন্ত্রণ, পানিনিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প নামে সমীক্ষা চলছে। আগের প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। তাই তাদের কিছু বিল দেওয়া হয়েছে। স্লুইসগেট এলাকার জমি অধিগ্রহণের জন্য এ মুহূর্তে আমাদের কোনো উদ্যোগ নেই।’

No comments

Powered by Blogger.