পুলিশের ফাঁদে পা দেন চিত্রনায়িকা কেয়া by ইন্দ্রজিৎ সরকার

চিত্রনায়িকা কেয়াকে গ্রেফতারে কৌশলী ফাঁদ পেতেছিল পুলিশ। গোপন খবর ছিল, গুলশানের নিকেতন এলাকার একটি বাসায় অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। সেখানে কেয়াসহ আরও অনেক তরুণীর নিয়মিত যাতায়াত আছে। এই তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর খদ্দের সেজে সেখানে যান দুই পুলিশ সদস্য। তারা কেয়ার সঙ্গে সময় কাটাতে চাইলে নির্ধারিত টাকার চুক্তিতে সে ব্যবস্থা করে দেন বাড়িওয়ালি সাবিনা ইয়াসমীন পপি। এরপর ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে


টাকা তোলার নাম করে একজন বাইরে এসে অভিযানকারী দলের অন্য সদস্যদের খবর দেন। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতারকৃত তরুণীই (সাবরিনা ইতি) চিত্রনায়িকা কেয়া বলে নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার পুলিশ অভিযানের এ বর্ণনা দেয়।
এ ব্যাপারে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি মাসুদ পারভেজ সমকালকে বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এরা নিজেদের কুকর্মে চলচ্চিত্রের পরিচয়কে ব্যবহার করছে। শিল্পী নির্বাচনে কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা ঘটছে। শিল্পীদের নূ্যনতম যোগ্যতা নির্ধারণ ও বিষয়টি নজরদারিতে রাখার ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল বারেক সমকালকে বলেন, গ্রেফতারকৃত সাজ্জাদ হোসেন ও পপি দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। তবে কোনো বাসায়ই তারা ২-৩ মাসের বেশি থাকেন না। নিকেতনের এক নম্বর সড়কের ১৩/১৫ নম্বর বাসার সি-৫ ফ্ল্যাটটিও তারা চলতি মাসের শুরুতে ভাড়া নেন। সোহেল নামে পপির এক আত্মীয় কিছুদিন চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তার মাধ্যমে বিপথগামী মডেল বা অভিনেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পপি। খদ্দেরের চাহিদা অনুযায়ী তাদের বাসায় ডেকে নেন। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের তিন সদস্যের একটি দল ওই বাড়ির কাছে গিয়ে অবস্থান নেয়। এরপর এসআই মোস্তাফিজুর রহমান ও সোহেল রানা বাসায় ঢুকে পপির সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় মোস্তাফিজ নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন। তিনি কেয়ার উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে তিনি সময় কাটাতে চান। পপি জানান, কেয়াকে পাওয়া যাবে। তবে এ জন্য ৯০ হাজার টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে তিনি ৪০ হাজার ও কেয়া ৫০ হাজার নেবেন। মোস্তাফিজ রাজি হয়ে যান। এরপর তিনি কেয়াকে দেখতে চাইলে তাকে নিয়ে আসা হয়। কেয়া মোস্তাফিজকে বলেন, 'কি বিশ্বাস হচ্ছে না আমি নায়িকা কেয়া? ভালো করে দেখুন, পর্দার কেয়ার সঙ্গে মিলছে কি-না।' এরপর তিনি অগ্রিম টাকা দাবি করে বসেন। এ সময় এসআই সোহেল রানাকে নিজের বডিগার্ড পরিচয় দিয়ে মোস্তাফিজ তার হাতে ডেবিট কার্ড ধরিয়ে দেন এবং কাছাকাছি কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে বলেন। সোহেল নিচে এসে এসআই আবদুল বারেককে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় ঢোকেন। এ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা নিজেদের পরিচয় জানিয়ে বাসায় উপস্থিত দুই পুরুষ ও আট তরুণীকে আটক করেন।
গ্রেফতারের পর কেয়া বলেন, স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। ছয় বোন ও মাকে নিয়ে তার অভাবের সংসার। তাই মাঝে মধ্যে তিনি 'এ লাইনে' কাজ করেন। গতকাল গ্রেফতারকৃত ১০ জনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে আটজন ২০০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড়া পান। পপি-সাজ্জাদ দম্পতিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। পুলিশ দাবি করে, কেয়ার পারিবারিক ইতিহাস ভালো নয়। তার ছয় বোনই অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত।
চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৩ সালে মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত 'কঠিন বাস্তব' সিনেমার মাধ্যমে অভিষেক ঘটে কেয়ার। তার মূল নাম সাবরিনা ইতি। দেড় বছর মোটামুটি ভালোভাবেই চলচ্চিত্রে কাজ করেন কেয়া। ২০০৪ সালে কেয়া আনোয়ার নামে প্রবাসী এক যুবককে বিয়ে করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ছয় মাসের মাথায় তাদের সংসার ভেঙে যায়। দেশে ফিরে কেয়া আবারও চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার ছবিগুলো সাফল্যের মুখ দেখেনি। ২০০৫ সালের দিকে তিনি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন বলে গুঞ্জন ওঠে। কিছু পত্রিকায় এ নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয়। তার অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা 'মনে বড় কষ্ট' চলতি বছরের শুরুতে মুক্তি পায়। এটিও ব্যবসা সফল হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.