পলিটিক্যালি এবং সরকারের হয়ে কথা বলার মধ্যে তফাৎ কতটুকু? by মোহাম্মদ মতিন উদ্দিন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২৯ অক্টোবর ২০০৯ আইনশৃগ্ধখলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির চতুর্থ বৈঠকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে টেন্ডারবাজি, দখল ও চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সভাশেষে টেন্ডারবাজি, দখল ও চাঁদাবাজিসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, পলিটিক্যালি কথা বলা এবং সরকারের হয়ে কথা বলা ডিফারেন্ট। আমরা আগে পলিটিক্যালি বলেছি, টেন্ডারবাজ, দখলদার ও চাঁদাবাজদের কোনো জায়গা নেই।
এখন আজকের সভায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আইনমন্ত্রী ব্যারিসল্টার শফিক আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান সিকদার, পুলিশের আইজি নূর মোহাম্মদ, আনসার বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম, র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রকাশিত সংবাদটিতে এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, পলিটিক্যালি কথা বলা এবং সরকারের হয়ে কথা বলা ডিফারেন্ট। অর্থাত্ বিষয়টি এমন যে পলিটিক্যালি এবং সরকারের হয়ে কথা বলার মধ্যে বিরাট তফাত্ আছে। পলিটিক্যালি কথা বললে ধরে নেয়া যায় এ কথার মধ্যে ফাঁক আছে আর সরকারের হয়ে কথা বললে ধরে নিতে হবে এর মধ্যে কোনো ফাঁক নেই। সরকারের হয়ে কথা বলার অর্থ সেটা তারা কার্যকর করবেন এ নিশ্চয়তা তারা দিচ্ছেন। সারাদেশে দখল, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি দমনে সরকার ব্যর্থ হলে আইনশৃগ্ধখলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থিত সদস্যরা কী নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে তারা সরকার থেকে পদত্যাগ করবেন? যদি তারা এ ঘোষণা দিতে সক্ষম হন এবং বাস্তবে সেটাই করেন তাহলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কথার কিছু যথার্থতা থাকে অর্থাত্ পলিটিক্যালি কথা বলা এবং সরকারের হয়ে কথা বলার মধ্যে তফাত্টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু আমার মনে হয় না যে পলিটিক্যালি কথা বলা আর সরকারের হয়ে কথা বলার মধ্যে কোনো তফাত্ আছে। এর প্রমাণ দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান। ২৫ অক্টোবর সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সব ধরনের চেষ্টার পরও দ্রব্যমূল্য পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সরকারের চেষ্টা অব্যাহত আছে (সূত্র : ‘আমার দেশ’, ২৬ অক্টোবর ২০০৯)। এ কথা স্বীকার করার পরও বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান বহাল তবিয়তে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবেই আছেন। সরকারের ব্যর্থতার দায় ঘাড়ে নিয়ে তিনি পদত্যাগ করেননি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে তিনি শুধু পলিটিক্যালি কথা বলেছেন বিষয়টি এমন নয়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যর্থতার দায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি কার্যক্রমের প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করে। এরপরও যখন তিনি পদত্যাগ না করে বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবেই তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তখন বলা যায় টেন্ডারবাজি, দখল ও চাঁদাবাজি দমনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও ব্যর্থ হবেন এবং ফারুক খানের মতো তারও মন্ত্রিত্ব বহাল থাকবে। অর্থাত্ পলিটিক্যালি কথা বলা এবং সরকারের হয়ে কথা বলার মধ্যে যে তফাত্ নেই সেটাই তিনি প্রমাণ করবেন।
প্রমাণ আরও আছে সেটা আমরা সবাই জানি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ব্দ করা হবে এই মর্মে কথা থাকলেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ব্দ হয়নি। বরং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে নানাভাবে জায়েজ করার কসরত আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রধানন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদের মুখে। টেন্ডারবাজি, দখল ও চাঁদাবাজি দমনেও একই চিত্র যে দেখা যাবে না এর কোনো গ্যারান্টি নেই।
সমাজে যে কোনো ঘটনাই ঘটুক না কেন তার পেছনে কারণ থাকে। কেন সেটা ঘটছে এ বিষয়ে যদি আমরা মনোযোগী না হই তবে এসব ঘটনা থেকে সমাজকে মুক্ত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সব ঘটনার পেছনে যে কার্যকারণ থাকে সেই বিষয়টি সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেই কার্যকারণ থেকে সমাজকে মুক্ত করার চেষ্টা চালালে কার্যকারণ থেকে সৃষ্ট উপসর্গগুলো দূর করা মোটেই অসম্ভব কিছু নয়। ডাক্তাররা বলেন জ্বর কোনো রোগ নয়, জ্বর হচ্ছে রোগের উপসর্গ। রোগ দমন করতে পারলে জ্বর এমনিতেই সেরে যায়। সেই রকমভাবেই বলা যায় বাংলাদেশের সমাজে টেন্ডারবাজি, দখল, চাঁদাবাজি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড—এসবই হচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বারা অনুসৃত নীতির ফলাফল। রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব রাষ্ট্র পরিচালনার প্রশ্নে যেসব নীতি দ্বারা পরিচালিত হয় বা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে, তারই ফল হিসেবে সমাজে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। এদিক থেকে বলা যায় উপসর্গ দমনের প্রশ্নে অনুসৃত নীতিকাঠামোর পর্যালোচনা বেশি প্রয়োজন। নীতিকাঠামোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন না এনে উপসর্গ দমন করা সম্ভব নয়। ঘুরে-ফিরেই তা সামনে এসে হাজির হবেই।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে নীতি অনুসরণ করে সেটা তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি। তথাকথিত এজন্য যে মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রকৃত অর্থে মুক্ত নয়। প্রকৃত অর্থে মুক্তবাজার অর্থনীতি হলে পুঁজি ও পণ্যের অবাধ চলাচলে কোনো বাধা থাকত না। বাজারই সব কিছু নির্ধারণ করত। কিন্তু তা হয় না। শুধু শিল্পে উত্পাদিত পণ্যকে পণ্য হিসেবে গণ্য করা ঠিক নয়, শ্রমশক্তিও একটা পণ্য। বিশ্বব্যাপী এ শ্রমশক্তির চলাচলে যথেষ্ট বিধিনিষেধ বিদ্যমান। শুধু তাই নয়, শিল্পে উত্পাদিত পণ্যের ক্ষেত্রেও এ বিধিনিষেধ আরোপ করে বৃহত্ পুঁজির ধারক প্রতিষ্ঠানগুলো বা তার পক্ষে রাষ্ট্র। যার কারণে এই অর্থনীতিকে মুক্তবাজার অর্থনীতি না বলে বলা যায়—কিছু বৃহত্ পুঁজির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি। অর্থাত্ বিশ্বব্যাপী বৃহত্ পুঁজির স্বার্থকে অবাধ করে দেয়া হচ্ছে এই তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতির লক্ষ্য। মুক্তবাজার অর্থনীতি হলে তা হবে প্রতিযোগিতামূলক; কিন্তু দেখা যায় এ প্রতিযোগিতাকেও তারা কোণঠাসা করে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে। সম্প্রতি চীন-মার্কিন বাণিজ্যিক সংঘাত চরমে উঠেছে। মার্কিন প্রশাসন এখন নানা উপায়ে তাদের দেশে চীনা পণ্যের বাজারকে সঙ্কুচিত করছে গত ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা চীন থেকে আমদানিকৃত টায়ারের ওপর ৩৫ শতাংশ বাড়তি ট্যারিফ ধার্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তে বিরাট ধাক্কা খেয়েছে চীনের টায়ার শিল্প। প্রত্যুত্তরে চীনা কর্তৃপক্ষও তাদের দেশে আমেরিকা থেকে রফতানিকৃত অটোমোবাইল সামগ্রী ও পোলট্রি পণ্যের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং বলেছে, আমেরিকা তাদের দেশের ত্রুটিযুক্ত পণ্য অথবা দেশে চাহিদা নেই এমন পণ্য চীনে রফতানি করছে। চীনা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটি শক্তিশালী তদন্তও দাবি করেছে।
মার্কিন প্রশাসন অভিযোগ করেছে, চীনা সরকার তার উগ্র জাতীয়তাবাদী অবস্থান থেকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যার পেছনে লুকিয়ে আছে এক ধরনের ‘অর্থনৈতিক সংরক্ষণবাদ’। মজার বিষয় হলো, সম্প্রতি রাশিয়ার পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত শিল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলন জি-২০ এর সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা চীনের চেয়ে আমেরিকা এবং পশ্চিমের বৃহত্ শিল্পোন্নত দেশগুলোকেই এ সংরক্ষণবাদের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। গত জুলাই মাসে চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এসব সমস্যা নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘চীন-মার্কিন কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপ’ নামে একটি উচ্চপর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। এ বৈঠকে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি, বরং সমস্যা আরও বেড়েছে। ফলে আমেরিকার বাজারে চীনা পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও চীনা ব্যবসায়ীরা সেখানে ব্যবসা করতে পারছেন না। শুধু চীনা মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোই নয়, চীন-মার্কিন যৌথ মালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলোকেও মার্কিন বাজারে ব্যবসা চালাতে বিরাট হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে গায়ের জোরে চীনকে পর্যুদস্ত করতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মুক্তবাজার অর্থনীতি যে স্বাভাবিক প্রতিযোগিতার অর্থনীতি নয়, সেটা উপরোক্ত অবস্থা থেকে অনুধাবন করা কষ্টকর বিষয় নয়। যেখানে দুটি শক্তিশালী অর্থনীতির মধ্যে এ অবস্থা সেখানে বাংলাদেশের মতো দেশের অবস্থা কেমন হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। বৃহত্ পুঁজির স্বার্থে নিবেদিতপ্রাণ বাংলাদেশের শাসকশ্রেণীর কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে সম্পদের কেন্দ্রীভবন ঘটছে বৃহত্ পুঁজির ঘরে। আর এ কারণেই এ দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হতে পারছে না। বিদেশি বৃহত্ পুঁজির স্বার্থকে এ দেশের শাসকশ্রেণী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবাদান করছে, আর এ কারণে দেশের গণমানুষের জীবন-জীবিকা এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দোল খাচ্ছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মসূচি দরকার এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য তার অভাব রয়েছে। ফলে মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু পাওয়ার জন্য। স্বয়ং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেখানে বৃহত্ পুঁজির স্বার্থকে পাহারা দেয়ার বদৌলতে গোপনে সম্পদ অর্জন করে নিজেদের ভবিষ্যত্ বিলাসবস্লল জীবন নিশ্চিত করছে, সেখানে অধস্তনরা টেন্ডারবাজি, দখল ও চাঁদাবাজি করবে—এটাই তো স্বাভাবিক। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে বিদেশি বৃহত্ পুঁজির স্বার্থরক্ষার যে ধারাবাহিকতা রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বে চলছে তার অবসান ঘটাতে হবে। রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের নীতি কাঠামো হতে হবে এমন যাতে করে দেশীয় অর্থনীতি থেকে সম্পদের কেন্দ্রীভবন দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। এর ফলে সমাজে নৈতিকতার একটি সুদৃঢ় ভিত্তি রচিত হবে, যা কিনা সমাজে মানুষকে অসামাজিক কাজ থেকে বিরত করার পথে এগিয়ে নেবে। যে নীতি-কাঠামো দ্বারা এখন দেশ পরিচালিত হচ্ছে তা বহাল রেখে টেন্ডারবাজি, দখল ও চাঁদাবাজি বন্ব্দ করা যাবে না। ফলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পলিটিক্যালি কথা এবং সরকারের কথার মধ্যে কোনো তফাত্ দেখার সম্ভাবনা আমরা পাব বলে মনে হয় না। রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব কর্তৃক অনুসৃত নীতির কারণে টেন্ডারবাজি, দখল ও চাঁদাবাজি ছাড়াও সন্ত্রাস মাথাচাড়া দেবে এটাই স্বাভাবিক। আর এসব দমনের জন্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যতই চলুক না কেন, তা বন্ব্দ করা যাবে না। প্রথমেই বলেছি, আমাদের রোগের কারণ নির্ণয় করতে হবে, উপসর্গ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কিন্তু একথা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাথায় ঢুকবে এমনটা আশা করা যায় না। কেননা তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিই হচ্ছে বিদেশি বৃহত্ পুঁজির খেদমত করে নিজেদের বিলাসবস্লল জীবন নিশ্চিত করা।
তা হলে উপায় কী? উপায় যে নেই এ কথা সঠিক নয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা অনুসৃত অর্থনৈতিক নীতির পরিবর্তন এ ক্ষেত্রে অপরিহার্য। তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি পরিত্যাগ করে জাতীয় অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে দেশীয় শিল্পের জন্য দেশীয় বাজার সংরক্ষণমূলক নীতি অবলম্বন করাই হবে প্রধান করণীয়। এ কাজ করতে হলে শুল্ক ও কর কাঠামোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে।
শুধু তাই নয়, ব্যাংক ঋণ নীতির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন প্রয়োজন। অর্থনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সেসব নিয়ম-কানুন আমাদের অপসারণ করতে হবে, যেসব নিয়ম-কানুনের কারণে সম্পদের কেন্দ্রীভবন ঘটে বিদেশি বৃহত্ পুঁজির ঘরে। এই পথ অবলম্বন ছাড়া সমাজ থেকে টেন্ডারবাজি, দখল ও চাঁদাবাজি বন্ব্দ করা যাবে না। বন্ব্দ করা যাবে না অর্থনীতিতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, যে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তথাকথিত মুক্তবাজার অর্থনীতি অনুসরণ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বই হয়ে পড়েছে মধ্যস্বত্বভোগী। রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে যখন এ অবস্থা তখন নিচের দিকে তা থাকবে না এটা নিছক কল্পনামাত্র।
দৃষ্টি আকর্ষণ
অনিবার্য কারণবশত আজ এবনে গোলাম সামাদের নির্ধারিত কলাম ‘প্রতিপক্ষ’ পত্রস্থ করা সম্ভব হল না। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

No comments

Powered by Blogger.