কুমিল্লা সিটি নির্বাচন-দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে স্বস্তিতে নেই আফজল খান by আনোয়ার হোসেন ও গাজীউল হক


লীয় সমর্থন পাওয়ার পরও স্বস্তিতে নেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আফজল খান। কারণ দলের অনুরোধ সত্ত্বেও বিদ্রোহী দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাননি। উল্টো তাঁরা শারীরিক অসুস্থতার কারণে আফজল খানকেই সরে যেতে বলছেন। কুমিল্লা সদরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অন্যতম কারিগর তিন সাংসদ আ হ ম মুস্তফা কামাল, আ ক ম বাহাউদ্দিন ও মুজিবুল হক প্রকাশ্যে আফজল খানকে সমর্থন


দিয়েছেন। তবে তাঁদের সঙ্গে আফজল খানের পুরোনো দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হয় নাঙ্গলকোটের সাংসদ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আ হ ম মুস্তফা কামালের গ্রামের বাড়িতে। সেখান থেকে বিদ্রোহী দুই প্রার্থীকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এই সভায় কুমিল্লার সাংসদ আবদুল মতিন খসরু, মো. মুজিবুল হক, নাছিমুল আলম চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। বিদ্রোহী প্রার্থীরা সরে না দাঁড়ালে ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দেন মুস্তফা কামাল।
অপর মেয়র পদপ্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো তাঁদের চাকর নই যে বললেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব। বরং আফজল খান অসুস্থ। তিনি গাড়ি থেকে নামতেই পারেন না। তাই তাঁকে সরিয়ে আমাকে সমর্থন দেওয়া হোক।’
আরেক প্রার্থী আনিসুর রহমান বলেন, ‘কামাল ভাই আমাকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলেছেন। কিন্তু আমার পক্ষে সরে আসা সম্ভব নয়। আফজল খান শারীরিকভাবে অসুস্থ, গাড়িতে বসে ভোট চান। কিন্তু এই নির্বাচন হেঁটে ভোট চাওয়ার। তাই তাঁর সরে যাওয়া উচিত।’
আফজল খান গতকাল শহরের নূরপুর এলাকায় উঠোনবৈঠকে নিজ দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘শুনছি, এক প্রার্থীর ৬ জানুয়ারির টিকিট কাটা আছে। দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। অন্যজন হলেন মনিরুল হকের ডামি প্রার্থী।’
তিন সাংসদের সঙ্গে আফজল খানের পুরোনো দ্বন্দ্ব: আফজল খানের পক্ষে গতকাল শুক্রবার গণসংযোগে নামেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, কুমিল্লা সদর আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার আওয়ামী লীগের আরেক সাংসদ নাছিমুল আলম চৌধুরী ও আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রউফ। চৌদ্দগ্রামের সাংসদ ও হুইপ মুজিবুল হকও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আফজল খানকে প্রাকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন।
তবে কুমিল্লার তিন সাংসদ মাঠে ও মাঠের বাইরে সমর্থন দিলেও তাঁদের সঙ্গে আফজল খানের দ্বন্দ্ব পুরোনো। তাঁদের এই দ্বন্দ্ব বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। দলের একাধিক নেতা বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে তাঁদের ঐক্য যতটা আন্তরিকতার, তার চেয়ে বেশি নিয়ম রক্ষার।
১৯৮৪ সালে কুমিল্লা পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে সদর আসনের বর্তমান সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিনের কাছে আফজল খান হেরে যান। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এর পর থেকে ওই দুই নেতার মধ্যে ২৭ বছর ধরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ২০০৬ সালের ১২ আগস্ট কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা ডাকা হয়। ওই সভা পণ্ড করে দেন আফজল খান। আফজল খানকে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে না রাখায় তাঁর সমর্থকেরা গুলি করে ওই সভা বানচাল করে দেয়। এর পর থেকে আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দেয়, যে কারণে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আফজল খানকে সদর আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের আফজল খান পক্ষ ও হুইপ মুজিবুল হকের পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। ওই ঘটনায় আফজল খানকে দায়ী করে ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে কুমিল্লা সার্কিট হাউসে বক্তব্য দেন মুজিবুল হক। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আফজল খানের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
আ ক ম বাহাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আফজল খানকে দলীয় সভানেত্রী প্রার্থী করেছেন। আমি ওনার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ওনার সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’
একই বক্তব্য দেন মুজিবুল হক ও মুস্তফা কামাল। তাঁরাও বলেন, আফজল খানের সঙ্গে তাঁদের বিরোধ নেই। দলের প্রার্থী হিসেবে তাঁর জন্য কাজ করতে বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.