প্র তি বে শ-লোভে পাপ...

তগুলো কারণে প্রতিহিংসার জন্ম হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো যে কোনো সম্পদ। উলপুরের [গোপালগঞ্জের সদরে অবস্থিত] জমিদারি নিয়ে বসু চৌধুরী পরিবারেও ঘটেছিল ছোট ভাইদের হত্যাচেষ্টার মতো বিরল ঘটনা। জনশ্রুতি আছে, উলপুর জমিদার বংশের প্রাণপুরুষ রঘুনন্দন বসু চৌধুরীর ছিল দুই স্ত্রী_ উমাতারা ও ললিতা। প্রথম স্ত্রীর গর্ভজাত তিন পুত্র_ রামদেব, রমাবল্লভ ও কৃষ্ণরাম। দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেয় রামজীবন ও রূপরাম। যখন উলপুরে বসতি


স্থাপনের প্রশ্ন ওঠে, তখন রামদেব উলপুরে আসতে অস্বীকার করেন। তবে তার স্ত্রী-সন্তানাদি সেখানে আসার সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময় দ্বিতীয় পক্ষের রামজীবন ও রূপরাম নিতান্তই বালক। ফলে তাদের মতামত নেওয়ার আর কেউ প্রয়োজন মনে করেননি। কৃষ্ণরাম বড় ভাই রমাবল্লভের কাছে প্রস্তাব করেন তাদের নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু সম্পদের ভাগ দিতে হবে বলে রমাবল্লভ এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানান। তারপরও বৈমাত্রেয় ছোট দুই ভাইকে নিয়ে আসেন কৃষ্ণরাম। বিষয়টি ভালোভাবে নেননি রমাবল্লভ। তিনি ছোট দুই ভাইকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। একদিন সন্ধ্যায় রমাবল্লভ রামদা নিয়ে ঢুকে পড়েন ছোট দুই ভাইয়ের ঘরে। ঢুকেই দেখেন, বিছানায় মশারি খাটানো। মশারির ভেতরে দুটি বালক ঘুমিয়ে আছে। বিছানায় রামদা দিয়ে কোপ বসিয়ে দেন রমাবল্লভ। এরপর দৌড়ে বেরিয়ে যান বাড়ির ভেতর থেকে। সারাবাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। রামকৃষ্ণ বাহির বাড়ি থেকে ছুটে এসে ঘটনা শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। বাড়ির সবাইকে বলেন সতর্ক থাকতে। আসলে ওই সময় বিল আর ঝোপঝাড়ে পূর্ণ থাকায় উলপুরে ছিল মশার ভীষণ উপদ্রব। এ কারণে সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গেই ছোটদের জন্য বিছানায় মশারি টানিয়ে রাখা হতো এবং বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া করিয়ে তুলে দেওয়া হতো বিছানায়। সেদিন রামজীবন ও রূপরাম রান্নাঘরেই রাতের খাওয়া সেরে নিচ্ছিল। আর এ সময়েই রমাবল্লভ এসে হামলা চালান। মশারির ভেতরে কাঁথায় ঢাকা কোলবালিশ দেখে রমাবল্লভ ভেবেছিলেন ওখানেই ঘুমিয়ে আছে রামজীবন ও রূপরাম। কিন্তু রান্নাঘরে থাকায় বেঁচে যায় দুই ভাই। এরপর কৃষ্ণরাম রমাবল্লভকে বোঝাতে সক্ষম হন, লোভে পাপ হয়। বৈমাত্রেয় হলেও রামজীবন ও রূপরাম তাদের ভাই। এসব কর্মকাণ্ডে তার কপালে জুটেছে শুধুই অপযশ। তখন রমাবল্লভ রামজীবন ও রূপরামকে সম্পদের সমান ভাগ দিতে রাজি হন। আর এভাবেই মিটে যায় বসু চৌধুরী পরিবারের পারিবারিক বিরোধ।
সাইফুল ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.