অবৈধ সমুদ্রযাত্রা-বিপর্যয় নয়, সম্ভাবনার উপকূল চাই

থায় আছে বাঘে ছুঁলে আঠারো, আর পুলিশ ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। কিন্তু সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রাক্কালে কক্সবাজার উপকূলে আটক ১০ জনকে তা সত্ত্বেও ভাগ্যবানই বলা যেতে পারে। সন্দেহ নেই, তাদের সবাই এক সম্ভাবনাময় জীবনের স্বপ্ন নিয়ে দুর্গমযাত্রার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু সে যাত্রা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সেন্ট মার্টিনের অদূরে শতাধিক যাত্রীবোঝাই ট্রলারডুবির মধ্য দিয়ে তা আরেকবার প্রমাণ


হয়েছে। পথের দূরত্ব ও বিপদই শেষ নয়, মালয়েশিয়াতেও অপেক্ষা করছে এক অনিশ্চিত জীবন। তা সত্ত্বেও অক্টোবরের শেষে মৌসুমি বৃষ্টিপাত শেষ হওয়ার পর থেকেই কমবেশি সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য এভাবে ছোট ছোট ট্রলার ও নৌকায় চড়ছে ভাগ্যান্বেষীরা। এদের একটি বড় অংশ মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় বাংলাদেশিরাও। এভাবে দেশের নাগরিককে প্রায় আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়া যায় না। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সমুদ্রযাত্রাও বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকর নয়। তারা বিদেশীয় সাধারণত বাংলাদেশি পরিচয়েই হাজির হয়। এ ধরনের অবৈধ অভিবাসন মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডসহ কর্মসংস্থানের জন্য সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। প্রয়োজনে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও অবৈধ সমুদ্রযাত্রা প্রতিরোধে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আমরা মনে করি, উপকূলের এমন যাত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে জনমত গঠনেও প্রশাসনকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিকরা কেন বিপজ্জনক পথ ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বেছে নিচ্ছে, তাও বিবেচনা করতে হবে। আটক অবৈধযাত্রীদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পেঁৗছে দেওয়ার জন্য দালালরা জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। এই অর্থ বৈধভাবে আকাশপথে যাত্রার খরচের কয়েক গুণ কম। বৈধপথে যাত্রা যদি সহজলভ্য হতো, তাহলে আমাদের নাগরিকরা যে অবৈধ পথ অবলম্বন করত না, তা নিশ্চিতই বলে দেওয়া যায়। সমুদ্রপথেও বৈধ যাতায়াত ব্যবস্থা করা যায় না? নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখতে পারেন। তবে সবার আগে অবৈধ সমুদ্রযাত্রা বন্ধ করতে হবে। বিপর্যয় নয়, আমরা সম্ভাবনাময় উপকূলই দেখতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.