চাঁপাইনবাগঞ্জে দুই মুক্তিযোদ্ধার ভিক্ষুকজীবন

রাস্তার ধারে এক অশীতিপর বৃদ্ধ চায়ের দোকানিকে বলছেন, ‘দুটো টাকা দিবা বাবা?’ দোকানি টাকা দিয়ে বললেন, ‘তুমি না মুক্তিযোদ্ধা! যুদ্ধ করে কি পেলে। এখন ভিক্ষা করো। লজ্জা করে না!’ এ কথা শোনার পর স্তম্ভিত ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছি। আর এখন আমি অর্থনৈতিক যুদ্ধে পরাজিত। কী করবো আমি?।’ এমনি অসহায় হয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন।

গ্রামের বাড়ি বিনোদপুর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর। ‘যখন অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন পরিবারের সদস্যরা অভুক্ত থাকে’ জানিয়ে জয়নাল আবেদিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হলো। এখন ভাবি আমরা কি পেলাম। ভিক্ষা করেই খেতে হবে আমাদের। কেউ দেখবে না। সরকার কি আমাদের কোনো দায়িত্ব নেবে না!’।

‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে’ এ খবর তাকে জানালে অশীতিপর এ মুক্তিযোদ্ধা বললেন, ‘ভালো খেতে পারি না, পরতে পারি না। দুঃখ নেই। মরার আগে এদের ফাঁসি দেখে যেতে পারলে জনম স্বার্থক হবে’।

এক মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে জয়নাল আবেদিনের সংসার। মেয়ের বয়স ১০। তার বিয়ে দিয়ে মরতে চান তিনি। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পান ২ হাজার টাকা। এ দিয়ে তিন জনের সংসার চলে না।

একই জেলার আরেক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ। বয়সের ভারে ন্যুব্জ। গ্রামের বাড়ি শ্যামপুর ইউনিয়নের উমরপুর গ্রামে। ৬ ছেলে ও ৩ মেয়ে নিয়ে ১১ সদস্যের পরিবার তার।

সংসার চালাতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিনের মতো তিনিও ভিক্ষুক। লোকে ভিক্ষুক মুক্তিযোদ্ধা বলে ডাকে। এটাই তার বাস্তব পরিচয়। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। অনেকে আমাকে বলে, দেশ স্বাধীন করে কী লাভ হলো তোমার?’

এর উত্তরে মুক্তিযোদ্ধা লতিফ বলেন ‘কিছু পাওয়ার জন্য যুদ্ধ করিনি। তবে জাতির কাছে প্রশ্ন, আমরা যুদ্ধ করে কি পাপ করেছিলাম? দু’বেলা খাওয়ার নিশ্চয়তা কি সরকার দিতে পারে না!’

‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে’ এ খবরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এসব জঘন্য ব্যক্তিদের ফাঁসি চাই। তবেই শান্তি পাবো।’

এ মুক্তিযোদ্ধার এক মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা। যৌতুক না দেওয়ায় তাকে তালাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি দুই মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে।

‘টাকার অভাবে তাদের বিয়ে দিতে পারছেন না’ বলে হতাশা প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ।

No comments

Powered by Blogger.